ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ, হাসপাতালে ভাঙচুর

স্টাফ রিপোর্টার: গাজীপুরের শ্রীপুরে আল-হেরা হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় হাসপাতালে ভাঙচুর চালিয়েছে স্বজনেরা। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

রোববার (১৩ অক্টোবর) দিবাগত মধ্যরাতে উপজেলার মাওনা চৌরাস্তা এলাকার আল-হেরা হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। নিহত প্রসূতি নারী ইসমত আরা বেগম (৩৮) উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের সিংদিঘী গ্রামের মো. শফিকুল ইসলামের স্ত্রী।

সরেজমিনে জানা গেছে, শ্রীপুর উপজেলার মাওনা চৌরাস্তা এলাকার আল-হেরা হাসপাতালে নিহত রোগীর স্বজনেরা লাঠি দিয়ে ভাঙচুর চালান। এ সময় প্রসূতির লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি হাসপাতালের মূল ফটকে রেখে অবস্থান নেন স্বজনেরা।

নিহত প্রসূতির স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে তার আটমাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে শারীরিক পরীক্ষা করানোর জন্য আল-হেরা হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. আয়েশা সিদ্দিকাকে দেখানো হয়। দেখানোর পরপরই চিকিৎসক স্ত্রী ইসমত আরাকে হাসপাতালে ভর্তির কথা জানায়। এরপর চিকিৎসক জানায় তার উচ্চ-রক্তচাপ রয়েছে চিকিৎসা দিতে হবে।

তিনি আরও জানান, চিকিৎসকের কথামতো তিনি তার স্ত্রীকে ভর্তি করান। হঠাৎ করে বিকেল পৌনে ৪টার দিকে হাসপাতালের ব্যবস্থাপক জানান তার স্ত্রীকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে হবে। পরে অ্যাম্বুলেন্সে করে ময়মনসিংহের পথে রওনা হন। হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার সময় একটি সেলাইন দেওয়া হয়েছিল তবে সেটি চলছিল না। তার স্ত্রীর নড়াচড়াও ছিল না। পরবর্তীতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, তার স্ত্রী অনেক আগেই মারা গেছেন।

তিনি অভিযোগ করেন, আলহেরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেরা বাঁচতে মৃত স্ত্রীকে ময়মনসিংহে পাঠায়।

নিহতের শাশুড়ি সুফিয়া খাতুন বলেন, ‘গতকাল দুপুরের দিকে আমার পুত্রবধূকে শারীরিক পরীক্ষা করানোর জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসি। আসার তিন ঘণ্টা পর জানতে পারলাম পুত্রবধূ মারা গেছে। বাড়ি থেকে সুস্থ মানুষ নিয়ে এলাম হাসপাতালে। আর লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে। এটা কেমন হাসপাতাল? যেখানে সুস্থ মানুষ নিয়ে এলে লাশ হয়ে ফিরতে হয়।

নিহত প্রসূতির ছোট বোন চম্পা আক্তার বলেন, ‘বোন তো মারা গেছে, বিচার না হওয়া পর্যন্ত লাশ নিয়ে হাসপাতালে থাকব। প্রয়োজনে সারারাত এখানেই অবস্থান নেব। এটা হাসপাতাল না কসাইখানা। এই কসাইখানার বিচার করতে হবে, তারপর লাশ দাফন হবে।’

এ সময় হাসপাতালের ব্যবস্থাপককে কর্মস্থলে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে কল দিলেও ধরেননি তিনি।

শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা প্রণয় ভূষণ দাস বলেন, বিষয়টি রাতেই শুনেছি। স্বজনদের লিখিত অভিযোগ পেয়ে বিধি মোতাবেক আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হাসপাতালের নিয়ন্ত্রক ডা. হোসাইন জানান, প্রসূতি রোগীটি দীর্ঘ সময় এই হাসপাতালে চিকিৎসা করাচ্ছিলো, কিন্তু শেষ ১৫ দিন যাবত তার কোনো খোঁজ-খবর ছিল না। ১৩ অক্টোবর বিকাল সাড়ে ৪টায় হাসপাতালে আনার পর দেখা যায় রোগীর ব্লাড প্রেশার ২০০/১২০। তাই তাৎক্ষণিক ময়মনসিংহ হাসপাতালে রেফার করা হয়। রোগীর স্বজনরা সময়ক্ষেপণ করে পরে সাড়ে ৫টার দিকে রোগী নিয়ে চলে যায়। হঠাৎ রাত সাড়ে ১১টার পর অপর একটা এম্বুলেন্সে লাশ নিয়ে হাজির হয়ে হাসপাতালে ভাঙচুর করে। আর এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে একটি পক্ষ ১ কোটি টাকা দাবি করছে। আমাদের হাসপাতাল কোনোভাবেই এই মৃত্যুর জন্য দায়ী নয়।

অভিযুক্ত ডা. আয়েশা সিদ্দিকা জানান, প্রসূতির এক্লামশিয়া ছিল, তাই তাকে নিয়মিত ৩-৪ দিন পর পর চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। কিন্তু ঐ রোগীটির গত ১৫ দিন কোন খোঁজখবর ছিল না। রোববার আসার পর এই গাফিলতির কারণ জানতে চাইলে প্রসূতি জানায় তার স্বামী আসার ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়নি। এই রোগীর ব্যাপারে আমার বা হাসপাতালের কোনো গাফিলতি নেই।

শ্রীপুর থানার ওসি জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, খবর পেয়ে গতকাল রাতেই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। রোগীর স্বজনদের হাসপাতাল ভাঙচুর না চালানোর জন্য বলা হয়েছে। স্বজনদের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

Scroll to Top