রিপন মাহমূদ. মানিকগঞ্জ: হিমেল হাওয়ায় পিঠাপুলির মৌ-মৌ সুভাষ ছড়িয়ে মানিকগঞ্জে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৩দিনব্যাপী জাতীয় পিঠা উৎসব।
বুধবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে থেকে জেলা শিল্পকলা একাডেমি চত্তরে এই পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়। লুপ্তপ্রায় পিঠাপুলিকে জনপ্রিয় করে তোলা এবং শিশুদের ফাস্টফুড থেকে দূরে রাখা থেকেই এই উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। সেই সাথে রয়েছে মা-দাদী-নানীর হাতের ছোঁয়া পিঠার স্বাদ ও গন্ধের পরশ।
জেলা শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে বাঙালীর লৌকজ ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এই পিঠা নিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৩দিনব্যাপী জাতীয় পিঠা উৎসব।
ভাপা, চিতই, মেরা, পাটি সাপটা, হরেক রকম পুলির সাথে যোগ হয়েছে খিরসাবাড়ি, মুখপাকন, রাজবরফি, ঝালবৈঠক, চিকেন মমো, দুধ সিঙ্গারা, মুগ পাকন, ডিম সুজি, চ্যাপা পুলি, কলংকীনি রাধাসহ বাহারী নাম ও স্বাদের পিঠার ১২টি স্টল বসেছে এই উৎসবে।
প্রতিটি স্টলে ২ গ্রুপ করে রন্ধন শিল্পী তাদের পিঠার পসরা বসিয়েছেন। মেলা শেষে এসব রন্ধন শিল্পীদের মান যাচাই করে দেয়া হবে পুরস্কারও। পিঠা খেয়ে তার স্বাদ, রূপ ও সুভাষ নিয়ে রিভিও দিয়ে যাচ্ছেন আগতরা। অনেকেই পিঠার স্বাদে মুগ্ধ হয়ে পরিবার পরিজনের জন্য অর্ডারও দিচ্ছে এই উৎসব থেকেই। শিশুরাও নেচে-গেয়ে উৎসবটিকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছে।
স্টলে পিঠা এক বিক্রেতা রেহেনা ইয়াসমিন জনান, আমার স্টলের দুধ পিঠাগুলোই বেশী বিক্রি হচ্ছে। আমার স্টলে দুধ সিংগারা, মুগপাকন এবং বিস্কিট পিঠা তবে আমার এখানে সিংগারাটাই বেশী বিক্রি হচ্ছে।
উৎসবে পিঠা খেতে আসা শিক্ষার্থী লাম-ইয়া রহমান জানান, আমি বাসায়তো মাঝে মাঝে পিঠা খাই তবে পিঠা উঠসবে কখনোই খাওয়া হয়নি, আজ প্রথম আসলাম এবং হরেক রকম বাহারী নামের পিঠা খেলাম। আমারতো খুবই ভালো লাগছে। এছাড়াও এখানে যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে সেটাও আমার ভালো লাগছে। এমন উৎসব প্রতি বছরেই চাই।
নারী উদ্দোক্তা ফরিদা পারভিন জানান, আমার স্টলে প্রায় দশ বারো রকমের গ্রামীন পিঠা রয়েছে, দর্শনার্থীর সমাগম বেশী হওয়ায় আশানুরুপ বিক্রিও ভালো হচ্ছে। তবে আমার এখানে মোড়গ সমুচা ও পাটি সাপটার চাহিদাটা একটা বেশী রয়েছে। তবে সব রকম পিঠাই ভালো বিক্রি হচ্ছে।
এই উৎসবে মমো বিক্রেতা অপেক্ষা খান জানান, আমার স্টলে আমি শুধু মাত্র চিকেন মমো বিক্রি করেছি। লোক সমাগম বেশী থাকায় উৎসব শুরুর এক ঘন্টার মধ্যেই আমার সকল মমো মেষ হয়ে গেছে। আমি ভাবিনি যে মমোর এতো চাহিদা হবে। অনেকেই না পেয়ে আগামীে কালকের জন্য অগ্রিম অর্ডার দিয়ে যাচ্ছেন। এমন উৎসবে পিঠার স্টল দিতে পেড়ে আমি খুঁশি।
অপর পিঠা স্টলের কর্ণধার ন্যাশনাল পলিটেনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে (এনপিইই)’র পরিচালক ড. মোহাম্মদ ফারুক হোসেন জানান, আমাদের বাচ্চারা ফাস্টফুড খেয়ে অতিরিক্ত স্বাস্থ্যবান ও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। আজ এ্ পিঠা উৎসবের কারণে তারা হাতে তৈরী স্বাস্থ্য সম্মত পিঠা খেতে পাড়ছে। আমি আহ্বান করবো এমন উৎসব যেন মাঝে মাঝেই করা হয় তাহলে সবাই স্বাস্থ্য সম্মত খাবার খেতে পাড়বে।
জেলা শিল্পকলার কালচারাল অফিসার, সেলিনা সাঈয়েদা সুলতানা আক্তার বলেন, এই পিঠা উৎসব সারাদেশ ব্যাপি পালিত হচ্ছে। যেহেতু মানিকগঞ্জ ঐতিয্যের দিক থেকে অনেক বিখ্যাত। সংস্ক্তি ও পিঠা সংস্কৃতির দিক থেকেও তাই । সেই দিকগুলো লক্ষ রেখে জেলার লুপ্ত প্রায় অনেক রকমের পিঠাগুলো সকলের সামনে তু্লে ধরার এবং কোমলমতি বাচ্চাদেরকে ফাস্টফুডের খাবার থেকে কিছুটা হলেও বিরত রাখার জন্যই আমাদের এ আযোজন।