নিজস্ব প্রতিবেদক: হরিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমানকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করছেন মানিকগঞ্জ ২ আসনের সংসদ সদস্য কন্ঠ শিল্পী মমতাজ বেগম। শুক্রবার হরিরামপুর উপজেলা চত্তরে উন্মুক্ত সংবাদ সম্মেলনে নিজ দলের সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনেন হরিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান।
তবে সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম ভাষ্য তিনি সন্ত্রাসের রাজনীতি করেন না, উন্নয়নের রাজনীতি করেন। হরিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কর্মকান্ডই হরিরামপুরে আইনশৃংখা পরিস্থির অবনতি হচ্ছে।
অপর দিকে উপজেলা চেয়ারম্যানের ভাষ্য তিনি জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগচ্ছেন , তাকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র হচ্ছে ও পাশাপাশি হরিরামপুরের আইন শৃংখলার চরম অবনতির জন্য সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমকেই দায়ী করেন।
সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদ ও মিথ্য মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি এমপি হিসেবে দাঁড়ানোর ঘোষনা দিয়েছেন ও হরিরামপুরে একটি বালু মহল ইজারাকে কেন্দ্র করে এমপি মমতাজ বেগম ও তার অনুসারিরা তার উপর নাখোশ হয়েছে। এরই জের ধরে হরিরামপুরে তার অনুসারী আওয়ামীলীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি হয়রানী মুলক মামলা দায়ের করেছেন। ওই সব মামলায় তার ছেলেকে আসামী করা হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করে জানান, হরিরামপুর উপজেলার লেছড়াগঞ্জ বালু মহল ইজারা নিতে এমপি মমতাজ বেগমের তার পিএসকে দিয়ে টেন্ডার দালিখ করেন। কিন্তু বালু মহলটি না পেয়ে মমতাজ বেগম ও তার অনুসারি ক্ষিপ্ত হয়েছেন। এর পর থেকে এমপি মমতাজ বেগম বালুমহলটি বাতিল চেয়ে ভুমি মন্ত্রনালয়ের সাধারন শাখা -২ কাছে গত ১১ মে একটি ডিও লেটার পাঠান। ওই ডিও লেটারের প্রেক্ষিতে ভুমি মন্ত্রনালয়ের সাধারন শাখা-২ সহকারী সচিব মো. জসিম উদ্দিন পাটোয়ারি গত ১৮মে (স্মারক নং ৩১.০০.০০০০.০৫১.৩৭.০৪৮.১৯.১০৮) মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে একপি পত্র পাঠায়। সংশ্লিষ্ট সুত্রমতে, জেলা প্রশাসকের পাঠানো পর বিষয়টি তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট দফতরে তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরন করে। বালুমহল বন্ধের কোন ধরনের হেতু নেই মর্মে ওই প্রতিবেদনের উল্লেখ্য করা হয়।
শুক্রবার বিকালের সংবাদ সম্মেলনে হরিরামপুরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরম অবনিত ঘঠেছে বলে দাবী করে দেওয়ান সাইদুর রহমান আরো বলেন আইন শৃংখলা অবনতির জন্য নেপথ্যে রয়েছেন এমপি মমতাজ বেগম এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এর মারাত্বক প্রভাব পড়বে। এছাড়া তিনি এমপি মমতাজের বিরুদ্ধে বিএনপি ও জামায়াতের
নেতাদের দলে ভেড়ানোর অভিযোগ তুলে ধরেন। হরিরামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লুৎফর রহমান হচ্ছে সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান। লুৎফর রহমান একসময় ছাত্রদলের রাজনীতি করতো। এখন মমতাজ বেগমের নির্দেশে হরিরামপুরে সন্ত্রাসের রাজনীতি করছে। এছাড়া মমতাজ বেগমের সন্ত্রাসী বাহিনী হরিরামপুরে দলীয়
নেতাকর্মীদের বিনা কারণে মারধর করছে আবার তাদেরই আসামী করা হচ্ছে। অথচ তার অনুসারীরা মারধরের শিকার হলেও থানা পুলিশ কোনো মামলা নিচ্ছে না।
সম্প্রতি এমপি মমতাজ বেগমের লোকজনের হাতে আহত ধুলশুরা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী কালাম বলেন, উপজেলা চত্বরে আসা মাত্র এমপি অনুসারী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লুৎফর রহমানের নেতৃত্ব ১৫-২০ জন তাকে রক্তাক্ত করেছে। এর পর থানায় নিয়ে পুলিশের সামনেই পুনরায় মারধর করা হয়। হামলায় আহত হলাম, আবার আমাকেই মামলার আসামি করা হলো। আমার পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার লিয়াকত আলী, বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আওলাদ হোসেন,
জেলা পরিষদের সদস্য ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হায়দার আলী তারেক, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবুল বাশার সবুজ, বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদুর রহমানফরিদসহ শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লুৎফর রহমান বলেন, তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা। আমাদের এমপি কোন সন্ত্রাসী বাহিনী পালেনা। আমরা কাউকে হামলা করিনি।
উপজেলা চেয়ারম্যান তার ছেলেসহ লোকজন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করছে। বালু মহালের নির্দিস্ট জায়গার বাইরে মাটি কাটছে চেয়ারম্যান। আমরা বালু মহালের বিরোধিতা করিনি, বেরি বাঁধ হুমকিতে পরবে বলে বালু মহাল নিয়ে কথা বলেছি।
এব্যাপারে সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম বলেন তিনি ১৫ বছর ধরে এলাকায় উন্নয়নের রাজনীতি করছেন। আমি শিল্পী মানুষ আমি কাউকে ধমক দেয়নি, কোনো দিন সন্ত্রাসের রাজনীতি করেননি । আামার কোনো সন্ত্রানী বাহিনী নেই। হরিরামপুর উপজেলা দেওয়ান সাইদুর রহমান কি করেন তা ওই এলাকার জনগন জানেন। তার লোকজন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের মারধর করছে। বালু মহালের টেন্ডার তিনি পেয়ে নদীর পাড়ের বাঁধা ঘেষে বালু কেটে নিচ্ছেন। এতে বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে ও স্থানীয় লোকজন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এই কারণে ওই বালু মহাল বন্ধের জন্য তিনি ডিও লেটার দিয়েছেন। হরিরামপুরে আইন শৃংখলা অবনতির জন্য দেওয়ান সাইদুর রহমানই দায়ী।
অপর দিকে হরিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সুমন কুমান আদিত্যর বক্তব্য নেওয়ার জন্য থানায় গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোনে একাধিবার কল দিলেও তিনি তা ধরেননি।