নিজস্ব প্রতিবেদক:মানিকগঞ্জে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার মধ্য দিয়ে ঢাকার গুলশানে হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় শহীদ এসি রবিউল করিমের (কামরুল) সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত ।
শোকসভায় রবিউলের স্বপ্ন পূরণে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য তাঁর প্রতিষ্ঠিত ব্লুমস বিশেষায়িত বিদ্যালয় পরিচালনায় সকলের সহযোগিতা কামনা করেন বক্তারা ।
এসময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় ও প্রতিষ্ঠানের সভাপতি জি.আর শওকত আলীর সভাপতিত্বে বক্তব্য প্রদান করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আব্দুল আলীম খান, ব্লুমসের সদস্য সচিব শহিদ রবিউল করিমের ছোট ভাই শামসুজ্জামান শামস, সহ-সভাপতি ইকবাল হোসেন কচি, পরিচালক (অর্থ বিভাগ) মো. গোলাম সারোয়ার, আজীবন সদস্য মো. সানোয়ার হোসেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ইন্সপেক্টর দেওয়ান মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান, রাজবাড়ী সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক রকিবুল হাসান খান, রবিউলের সহধর্মিণীর বড় ভাই চিকিৎসক কামাল উদ্দিন প্রমুখ।
স্মরণসভায় শহীদ এসি রবিউলের ছোট ভাই শামসুজ্জামান শামস বলেন, ২০১৬ সালের এই দিনে আমরা আমাদের ভাইকে হারিয়েছি। মানুষের জন্য দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে তিনি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য এ স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি একটি বৃদ্ধাশ্রম ও বিশেষায়িত শিশুদের জন্য আবাসিক ভবন করতে চেয়েছিলেন। জঙ্গিদের হাত থেকে মানুষদের বাঁচাতে গিয়ে তিনি শহীদ হয়েছেন। আমাদের তাকে ভালোবাসতে হবে। তাঁর আত্মত্যাগ আমাদের জন্য গর্বের, গৌরবের। তার যেসব কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে, সেগুলোকে পূর্ণ করতে হবে। তার কাজগুলোকে ভালোবাসলেই তার প্রতি ভালোবাসা জানানো হবে। স্কুলটি পরিচালনা করতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হচ্ছে। এজন্য সরকারি বেসরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন।
রবিউল করিমের বন্ধু মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ইন্সপেক্টর দেওয়ান মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান বলেন, রবিউল করিম স্বপ্নবাজ মানুষ ছিলেন। তিনি সমাজের পিছিয়ে পড়া শিশুদের নিয়ে ভাবতেন। সেই ভাবনা থেকেই তিনি এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। এমনকি তিনি মানুষের জন্য নিজের জীবনও বিলিয়ে দিয়েছেন। তার এই ভালোবাসাকে ধারণ করে আমাদের তার স্বপ্নকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সেজন্য তার প্রতিষ্ঠিত বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের স্কুলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এটির পাশে দাঁড়াতে হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আব্দুল আলীম খান রবিউলের সঙ্গে পরিচয়ের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) থাকার সময় রবিউলের সঙ্গে পরিচয় হয়। সে এই স্কুলের স্বপ্ন দেখেছিল। এরপর সেটি প্রতিষ্ঠা করে। একটি ছোট ঘর থেকে ধীরে ধীরে এখানে ভবন গড়ে তোলা হয়েছে। তবে বর্তমানে বিদ্যালয় পরিচালনায় বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। শিক্ষকদের বেতন পরিশোধ করতে কষ্ট হচ্ছে। তবুও শিক্ষকরা বিদ্যালয়টি পরিচালনা করছেন। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের এই বিদ্যালয়টি পরিচালনায় সকলস্তরের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সবাই মিলে স্কুলের পাশে দাঁড়িয়ে এটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তাহলেই রবিউলের স্বপ্ন বেঁচে থাকবে।
রাজবাড়ী সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক রকিবুল হাসান খান বলেন, যারা নিজের স্বার্থের চেয়েও মানুষের স্বার্থকে বড় করে দেখেন ও মানুষের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেন তারাই দেশপ্রেমিক। যেটির পরিচয় দিয়েছেন এসি রবিউল। তিনি দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। কিন্তু তার স্বপ্ন বেচে থাকবে। আমাদের সকলকে সেই স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তার কাজগুলোকে এগিয়ে নিলেই সেই স্বপ্ন বাঁচবে। স্কুলটির পরিচালনায় সকলকে যার যার অবস্থা অনুযায়ী এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।