তেরশ্রীতে পাকসেনাদের নারকীয় হত্যাযজ্ঞে শহীদদের স্মৃতি স্তম্ভ

তেরশ্রীতে পাকসেনাদের নারকীয় হত্যাযজ্ঞে শহীদদের স্মৃতি স্তম্ভ

মুক্তিযুদ্ধে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২২শে নভেম্বর মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর উপজেলার তেরশ্রী গ্রামে রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়। এ সময় তেরশ্রীর জমিদার সিদ্ধেশ্বর প্রসাদ রায় চৌধুরী ও তেরশ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আতিয়ার রহমান সহ ৪৩ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। এই স্মৃতি রক্ষার্থে এলাকাবাসীর দাবীর মুখে ২০১২ সালে সরকার ৩০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে। 

জেলার ঘিওর উপজেলা থেকে ৩ কিমি উত্তরে তেরশ্রী গ্রামটি অবস্থিত। ১৯৭১ সালে এই দিনে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী এ দেশীয় দোসরদের সহায়তায় ভোরে তেরশ্রী গ্রামটি ঘিরে ফেলে। এরপর প্রায় ৬ ঘণ্টা ধরে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়। পুড়িয়ে দেয়া হয় গ্রামের অধিকাংশ বাড়ীর ঘর। অন্তঃসত্ত্বা  নারীও রেহাই পায়নি এই হত্যাযজ্ঞ থেকে। এ দিন তেরশ্রীর জমিদার সিদ্ধেশ্বর প্রসাদ রায় চৌধুরী ও তেরশ্রী কলেজের  অধ্যক্ষ আতিয়ার রহমান সহ ৪৩ জন নিরীহ নারী-পুরুষকে নিশংসভাবে হত্যা করা হয়।

জমিদার সিদ্ধেশ্বর রায় চৌধুরীকে গায়ে কেরোসিন দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে এবং অধ্যক্ষ আতিয়ার রহমানকে বেনয়েট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়। হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা চলে যাবার পর আশপাশের অন্য গ্রামের লোক এসে ঐ সকল মৃত দেহগুলো ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী শ্মশানে নিয়ে যায় এবং কবরস্থানে নিয়ে মাটি চাপা দেয়।

এলাকাবাসীর দাবির মুখে ২০১১ সালে শহীদদের স্মরণে তেরশ্রী গ্রামে সরকারিভাবে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় প্রশাসন। 

২০১২ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), তেরশ্রী শহীদ স্মৃতি পরিষদ ও প্রগতিশীল মানুষদের সহযোগিতায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সহায়তা এবং এলজিইডির কারিগরি সহায়তায় প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে এই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। এই স্তম্ভের গায়ে ৩৬ জন শহীদের নাম লিপিবদ্ধ রয়েছে, বাকি ৭ জনের নাম তখন জানা যায় নি। ৩০ ফুট ও ১৭ ফুট উচ্চতার দুটি স্তম্ভ মূল বেদির ওপর দাঁড়ানো দৃষ্টিনন্দন নক্সায় নির্মিত হয়েছে এ শহীদ স্মৃতিস্তম্ভটি।

Scroll to Top