হরিরামপুর প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের পিয়াজচর গ্রামে অবস্থিত পিয়াজচর জামে মসজিদ। এলাকাবাসী মসজিদ কমিটির কাছে আয় ব্যয়ের হিসাব চাওয়া নিয়ে গ্রামবাসীর দু’গ্রুপের দ্বন্দ্বে উক্ত মসজিদ কমিটির সভাপতি মোঃ আয়নাল কাজী এবং উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতার নেতৃত্বে মসজিদ ঘড়ে তালা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার (১১ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মসজিদের সামনে মানববন্ধন করে পিয়াজচর গ্রামের কয়েকশ পুরুষ-মহিলারা। মানববন্ধনে মুসুল্লিসহ এলাকাবাসী বলেন, প্রায় ৩৫ বছর আগে পিয়াজচর গ্রামের মৃত আনোয়ার হোসেনের দানকৃত জমিতে মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
জানা যায়, মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি আয়নাল হক গত ১২ বছরেও মসজিদের কোনো আয়-ব্যয়ের হিসাব দিচ্ছেনো৷ সম্প্রতি সময়ে এলাকাবাসীসহ মসজিদের দাতা সদস্য নুর আলম সিদ্দিকি এক গণস্বাক্ষর সম্বলিত লিখিত অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও হরিরামপুর প্রেরণ করায় ক্ষিপ্ত হয় আয়নাল কাজী।
এ ঘটনায় গত ১ অক্টোবর মসজিদ কমিটির সভাপতি আয়নাল কাজী, মসজিদ কমিটির উপদেষ্টা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য কাঞ্চন বিশ্বাস, মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক জুলহাস বিশ্বাস ও কোষাধ্যক্ষ সামসুল দেওয়ান মসজিদে তালা দেন।
এরপর থেকেই মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারছেন না এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসুল্লীরা। দীর্ঘদিন ধরেই গ্রামবাসীর দুই গ্রুপের মধ্য বিবাদ চলছে। পাল্টাপাল্টি একাধিক মামলাও করেছেন উভয় পক্ষ।
তবে গ্রামবাসীর অভিযোগ মসজিদ কমিটির উপদেষ্টা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য কাঞ্চন বিশ্বাস একাধিক ব্যক্তির নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন।
মসজিদের দাতা সদস্য নুর আলম সিদ্দিকি বলেন, মসজিদের ১২ বছরের আয়-ব্যয়ের কোনো হিসাব নাই। হিসাব চাইলে সভাপতি আয়নাল হক বিভিন্ন হুমকি ধামকি দেন। এ বিষয়ে অনেকবার বিশৃঙ্খলার তৈরি হয়েছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর আমি ইউএনও ও থানা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেই। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে মসজিদে তালা দিয়েছে। আমাদের ১২ জনের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। অতিসত্ত্বর মসজিদের তালা খুলে মুসুল্লিদের নামাজের ব্যবস্থা করতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
পিঁয়াজচর গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, ১১ দিন ধরে মসজিদে তালা ঝুলছে। আমরা মুসুল্লিরা নামাজ পড়তে পারছি না, মসজিদে আযান হচ্ছে না। মসজিদের হিসাব চাওয়ায় মুসুল্লিদের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। তারা মসজিদের মাইক খুলে নিতে আসছিলো। এলাকার মুসুল্লিরা বাঁধা দেওয়ায় নিতে পারে নাই। দ্রুত মসজিদের তালা খুলে দেওয়ায় দাবি জানাই। যাতে এলাকার মুসুল্লিরা নামাজ আদায় করতে পারে।
নওয়াব আলী বলেন, গত শুক্রবার অন্য এলাকা থেকে ইমাম এনে মসজিদের ছাদে আমরা জুম্মার নামাজ আদায় করেছি। ওয়াক্তের নামাজ আমাদের বাড়িতেই পড়তে হচ্ছে। প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই, দ্রুত যেন আমাদের মসজিদের তালা খুলে দেওয়া হয়। আমরা যেন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে পারি। আর এর সঙ্গে জড়িত সবার বিচার চাই।
রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাহাব আলী বলেন, গত ১২ বছরে মসজিদের কোনো আয়-ব্যয়ের হিসাব দেয়নি সভাপতি আয়নাল কাজী। হিসাব চাওয়ায় তারা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে এবং মসজিদে তালা দিয়েছে। এদের কঠিন শাস্তির দাবি জানাই।
সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবুল বাশার সবুজ বলেন, আমি একজন মুসলমান হিসেবে এই কাজে যারা জড়িত তাদের ধিক্কার জানাই। মসজিদের আয়-ব্যয়ের হিসাব চাওয়ায় মসজিদে তালা দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় যাদের নাম এসেছে, তাদের দ্বারা এলাকাবাসী অনেক নির্যাতিত। আমি প্রশাসনের কাছে দ্রুত মসজিদের তালা খুলে দেওয়ার দাবি জানাই।
মসজিদের সভাপতি আয়নাল হক বলেন, আমি সাভার থাকি। চাবি আমার বোন জামাই লোকমানের কাছে আছে। ১২ বছর ধরে হিসাব দেইনা এ কথা সত্য নয়।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত কাঞ্চন বিশ্বাস অসুস্থ থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। জুলহাস বিশ্বাস ও সামসুল দেওয়ানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও রিসিভ করেননি।
হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহরিয়ার রহমান বলেন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে তালা দেওয়া খুবই ন্যাক্কারজনক ঘটনা। বিষয়টি অবগত হওয়ার সাথে সাথে আমি সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে বলেছি দুই পক্ষের সাথে বসে বিষয়টি সমাধান করতে। ইউপি চেয়ারম্যান আমাকে জানিয়েছেন বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষই কথা বলতে আগ্রহী। আজকে তারা আমার কাছে আসবেন। যদি এতে কোনো সমাধান না আসে তাহলে আমরা কঠোর আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
হরিরামপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান বলেন, এ কাজ যারা করেছে তারা সমাজের খুব খারাপ লোক। এ ঘটনায় এলাকার লোকজন খুব ক্ষুব্ধ। আমি এবং ইউএনও মহোদয় যত দ্রুত সম্ভব এ ঘটনার সমাধান করবো।