ঘিওর প্রতিনিধি:মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার চাঞ্চল্যকর ইয়াজুল ইসলাম (৩৬) হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন হয়েছে। রাতে হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও জড়িত মূলহোতাসহ ৩ আসামীকে আটক করেছে র্যাব-৪।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- ঘিওরের পূর্ব আশাপুর গ্রামের রহিম উদ্দিনের ছেলে সজীব (২৫), নিয়ামুদ্দিনের ছেলে স্বাধীন (২০) ও সলিমুদ্দিনের ছেলে মো. শরিফ (৪০)।
শুক্রবার সকালে র্যাব- ৪ (সিপিসি-৩) এর কোম্পানি কমান্ডার লে.কমান্ডার মোহাম্মদ আরিফ হোসেন বলেন, হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের গত ২৪ আগষ্ট রাতে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামীরা চাঞ্চল্যকর ইয়াজুল হত্যার সাথে সরাসরি জড়িত বলে স্বীকার করেছে।
আটককৃতদের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, বছর খানেক আগে ইয়াজুলের সাথে স্থানীয় শরিফের ২ বিঘা জমি কেনা নিয়ে একটি চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী ইয়াজুল শরিফের জমির মূল্য বাবদ ৫ লাখ টাকা পরিশোধ করে। পরবর্তীতে শরিফ জমির চুক্তিতে উল্লেখিত টাকার বেশি দাবি করলে এই বিষয় নিয়ে ইয়াজুল এর সাথে শরিফের একাধিক বার বাক-বিতন্ড হয়। ইয়াজুল জমি না নিয়ে শরিফকে টাকা ফেরত দিতে বললে শরিফ টাকা দিতে কালক্ষেপন করতে থাকে। বিষয়টি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ শালিশ বৈঠক করে ৬ মাসের মধ্যে টাকা পরিশোধ করার জন্য রায় দেয়। শরিফ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের চাপে গত ছয় মাসে ইয়াজুলের টাকা ফেরত দেয়। কিন্তু এই বিষয় নিয়ে শরিফ ইয়াজুলের প্রতি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকে।
এরই প্রেক্ষিতে শরিফ প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ইয়াজুলের চাচাতো ভাই সজিবকে ব্যবহার করে গত ২০ আগস্ট রাত ৯টার দিকে নদীতে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে ইয়াজুলকে ফোন করে ডেকে নিয়ে আসে। পূর্ব থেকে অপেক্ষমান শরিফসহ অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন স্বাধীনের ট্রলারে উঠে কালিগঙ্গা নদীতে ঘুরতে যায়। ট্রলারটি কালিগঙ্গা নদীতে কিছু দুর যাওয়ার পর সজিব, শরিফ ও তার সহযোগী অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন মিলে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ইয়াজুলের মাথার উপরে ও পিছনে, দুই হাতের কুনই ও হাতের আঙ্গুলে এলোপাতারি কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে ইয়াজুল এবং তার ব্যবহৃত মোবাইল ও হত্যা কাজে ব্যবহৃত আলামত নদীতে ফেলে দিয়ে হত্যাকারীরা রাত বারোটার দিকে বাড়িতে ফিরে যায়।
অনেক রাত হওয়ায় ইয়াজুল বাড়ীতে ফিরে না আসায় ইয়াজুলের স্ত্রী রিমা আক্তার ভিকটিম ইয়াজুল মিয়ার মোবাইলে ফোন করলে ফোন বন্ধ পেয়ে পরিবারের অন্যান্্য সকল সদস্য সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজাখুজি করে কোথাও না পেয়ে ২২ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ঘিওর থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করেন।
জিডি করার আনুমানিক ১৫ মিনিট পরই ইয়াজুলের লাশ উপজেলার সিংজুরী ইউনিয়নের পূর্ব আশাপুর কালীগঙ্গা নদী থেকে অর্ধগলিত অবস্থায় উদ্ধার করে ঘিওর থানা ও পাটুরিয়া নৌপুলিশ। পরের দিন ইয়াজুলের স্ত্রী রিমা আক্তার বাদী হয়ে পূর্ব আশাপুর গ্রামের রহিম উদ্দিনের ছেলে সজীব (২৫), নিয়ামুদ্দিনের ছেলে স্বাধীন (২০) ও সলিমুদ্দিনের ছেলে মোঃ শরিফ (৪০) আসামী করে ঘিওর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলা রুজু হওয়ার পর থানা পুলিশের পাশাপাশি র্যাব-৪, সিপিসি-৩, ছায়া তদন্ত শুরু করে। পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপের জন্য গ্রেফতারকৃত আসামীদের সংশ্লিষ্ট পাটুরিয়া নৌ-পুলিশ থানায় হন্তান্তর করা হয়েছে।
নিহত ইয়াজুল ইসলাম আশাপুর গ্রামের ছানো মিয়ার ছেলে। সে সৌদি আরব প্রবাসী। সম্প্রতি ছুটিতে দেশে এসে কৃষিকাজ শুরু করেন। তার ৪ বছরের একটি ছেলে আছে।