আগামী মাসেই হতে পারে নতুন নির্বাচন কমিশন

স্টাফ রিপোর্টার: নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে সার্চ কমিটি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সার্চ কমিটি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে নাম প্রস্তাব করবেন। আপিল বিভাগের একজন বিচারকের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি হবে। যোগ্যতা বিবেচনা করে তারা ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবেন। তাদের মধ্য থেকে পাঁচ জনকে নিয়ে রাষ্ট্রপতি গঠন করবেন নতুন নির্বাচন কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দুই জনের এবং কমিশনার হিসেবে আট জনের নাম প্রস্তাব করবে কমিটি। স্বল্প সময়ের মধ্যে সার্চ কমিটি গঠিত হলে আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা সম্ভব হবে।

গত শনিবার কয়েকটি রাজনৈতিক দল-জোটের সংলাপ শেষে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার বিদ্যমান আইনেই শিগগিরই একটি সার্চ কমিটি গঠন করবে। রীতি অনুযায়ী এ কমিটিতে ছয় জন সদস্য থাকবেন। তিনি বলেন, সরকার তার দল নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে নিরপেক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে সার্চ কমিটি করবে, কমিটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে ইসি পুনর্গঠনের কাজ করবে। পুনর্গঠিত ইসি ভোটারতালিকা হালনাগাদসহ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিমূলক যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

২০২২ সালের ২৭ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রথম বারের মতো আইন প্রণয়ন করে ছাত্র-জনতার বিপ্লবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার। ঐ আইনের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে ঐ বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে সভাপতির দায়িত্ব দিয়ে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করে দেন রাষ্ট্রপতি। ঐ কমিটির সুপারিশে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে কাজী হাবিবুল আউয়ালকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের ইসি গঠন করা হয়, যাদের নেতৃত্বে সর্বশেষ বিতর্কিত ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুতির পর কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন পদত্যাগ করে।

তৎকালীন সংসদ সচিবালয়ের সচিব কে এম আব্দুস সালাম প্রকাশিত গেজেটে বলা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৮ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য বিধান করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়; সেহেতু এত দ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হলো।

আইনের ১ ধারায় বলা হয়েছে, এই আইন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২ নামে অভিহিত হবে এবং যা অবিলম্বে কার্যকর হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করবেন, যার সভাপতি হবেন প্রধান বিচারপতির মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারক। সদস্য হিসেবে থাকবেন প্রধান বিচারপতির মনোনীত হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান এবং রাষ্ট্রপতির মনোনীত দুজন বিশিষ্ট নাগরিক। এ দুই বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে একজন হবেন নারী। তিন সদস্যের উপস্থিতিতে কমিটির সভার কোরাম হবে। এ কমিটির কাজে সাচিবিক সহায়তা দেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সার্চ কমিটি গঠনের ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশ রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করা হবে।

সার্চ কমিটির দায়িত্ব ও কার্যাবলি: আইনের ৪ ধারায় কমিটির দায়িত্ব ও কার্যাবলি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, অনুসন্ধান কমিটি স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করবে এবং এই আইনে বর্ণিত যোগ্যতা, অযোগ্যতা, অভিন্নতা, সততা ও সুনাম বিবেচনা করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে। এজন্য রাজনৈতিক দল এবং পেশাজীবী সংগঠনের কাছ থেকে তারা নাম আহ্বান করতে পারবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য প্রতিটি শূন্য পদের বিপরীতে রাষ্ট্রপতির কাছে ২ (দুই) জন ব্যক্তির নাম সুপারিশ করবে কমিটি।

সিইসি ও কমিশনারদের যোগ্যতা: আইনের ৫ ধারায় সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার হওয়ার যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পদের জন্য কোনো ব্যক্তিকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে, বয়স হতে হবে ন্যূনতম ৫০ বছর। কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা-সরকারি, বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত পদে বা পেশায় তার অন্যূন ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

প্রসঙ্গত, এর আগে ইসি নিয়োগে কোনো আইন ছিল না। কিন্তু ২০১২ সালে এবং ২০১৭ সালে পরপর দুই বার সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছিল। এর মধ্যে ২০১২ সালে কাজী রকিবউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিশন গঠন করা হয়, যারা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিতর্কিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করেছিল। একইভাবে ২০১৭ সালে সার্চ কমিটি কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন গঠন করে দিয়েছিল, যে কমিশনের অধীন ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর রাতের ভোট আয়োজন করা হয়। ঐ দুই সার্চ কমিটির প্রধান ছিলেন তৎকালীন আপিল বিভাগের বিচারপতি ও সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হাসান।

Scroll to Top