স্টাফ রিপোর্টার: সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচিতে জনগণের অংশগ্রহণ বাড়াতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিধিমালা পরিবর্তন করে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হতে পারে এবং বেশকিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে চালু থাকা চারটি স্কিম বহাল থাকবে, নতুন কোনো স্কিম আপাতত অন্তর্ভুক্ত করা হবে না।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষের পরিচালনা পর্ষদের প্রথম সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সভা শেষে সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য গোলাম মোস্তফা গনমাধ্যমকে জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পেনশন ব্যবস্থায় নিয়মিত সংস্কারের সুযোগ থাকে। কখনও বয়সসীমা, কখনও সুবিধা পরিবর্তিত হয়। অংশগ্রহণ বাড়ানোর স্বার্থে পেনশন কর্তৃপক্ষ কোনো বিশেষ জায়গায় পরিবর্তন আনার প্রয়োজন মনে করলে তা বিধিমালার মাধ্যমে করা সম্ভব, এমনকি আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলেও। এসব পরিবর্তন কর্মসূচিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে। অর্থ উপদেষ্টা এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন এবং সার্বিকভাবে কর্মসূচি জোরদার করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
গোলাম মোস্তফা আরও বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় প্রচারণা চালিয়ে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বেড়েছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে প্রচারণা সেভাবে সম্ভব হয়নি। এ কারণে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয়ে নতুন উদ্যোগ গ্রহণের প্রস্তাব সভায় উপস্থাপন করা হয়েছে। তবে কার্যক্রম পুনরায় চাঙ্গা করতে কিছুটা সময় লাগবে। সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়েছে যে চালু থাকা চারটি স্কিম বহাল থাকবে এবং নতুন কোনো স্কিম আপাতত অন্তর্ভুক্ত করা হবে না।
পেনশন স্কিমের বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত মুনাফা চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত হিসাব করে চলতি মাসেই গ্রাহকদের হিসাবে জমা দেওয়া হবে। গ্রাহকরা তাদের অ্যাকাউন্টে লগইন করে জমাকৃত অর্থ এবং অর্জিত মুনাফার পরিমাণ দেখতে পারবেন।
সামাজিক নিরাপত্তার একটি টেকসই কাঠামো গড়ে তুলতে ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করে। প্রাথমিকভাবে চারটি স্কিম— প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা এবং সমতা চালু করা হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ‘প্রত্যয়’ স্কিম চালুর ঘোষণা দেওয়া হলেও সেটি কার্যকর করা সম্ভব হয়নি।
সভায় উপস্থাপিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ৩ লাখ ৭২ হাজার ৩৭৮ জন গ্রাহক সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নিবন্ধন করেছেন। তাদের চাঁদা জমার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩০ কোটি ৯৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। এর মধ্যে ১২৪ কোটি ৯৯ লাখ ৫৫ হাজার ৬৬৯ টাকা সরকারি ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করা হয়েছে।
– সমতা স্কিম: নিম্ন আয়ের মানুষ, যাদের বার্ষিক আয় সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা। মাসিক চাঁদা ১,০০০ টাকা, যার অর্ধেক দেয় গ্রাহক এবং বাকি অর্ধেক দেয় সরকার। এ স্কিমে নিবন্ধন করেছেন ২ লাখ ৮৫ হাজার ৮৮৪ জন, চাঁদার মোট পরিমাণ ৪১ কোটি ৭০ লাখ ২৯ হাজার টাকা।
– প্রগতি স্কিম: বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য। এ স্কিমে ২২ হাজার ৪১০ জন নিবন্ধন করেছেন এবং ৪৭ কোটি ২৫ লাখ ৫০০ টাকা জমা পড়েছে।
– প্রবাস স্কিম: প্রবাসীদের মধ্যে অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে কম। এ স্কিমে ৯১০ জন নিবন্ধন করেছেন এবং ৪ কোটি ৮৫ লাখ ২৪ হাজার টাকার চাঁদা জমা দিয়েছেন।
– সুরক্ষা স্কিম: অনানুষ্ঠানিক খাতের কর্মীদের জন্য। এ স্কিমে ৬৩ হাজার ১৭৪ জন ৩৭ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, বর্তমান চারটি স্কিম অব্যাহত থাকবে এবং নতুন কোনো স্কিম আপাতত চালু করা হবে না।