স্টাফ রিপোর্টার: গুরুতর আহত অবস্থায় একটি ঈগল পাখিকে উদ্ধার করে চিকিৎসা ও সেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলেছিলেন রাজবাড়ী শহরের টিঅ্যান্ডটি এলাকার বাসিন্দা লিটন চক্রবর্তী।
মাস দুয়েক আগে একদিন সবার অগচরে ঈগলটি উড়াল দেয় তার আপন ঠিকানায়। কিন্তু দুই মাস পর সেই ঈগল পাখিটি আবার ফিরে এসেছে।
গত ৪ জুলাই রাজবাড়ী সদর উপজেলার বসন্তপুর এলাকার কয়েকজন কিশোর বিরল প্রজাতির ঈগল পাখিটিকে আটক করে। এসময় ঈগলে তীক্ষ্ণ নখ ও ঠোঁটের আক্রমন থেকে বাঁচতে ওই কিশোররা ঈগলটিকে আঘাত করে, এতে ঈগলটি একটি ডানা ভেঙে যায়। বিষয়টি দেখে সেখানকার এক ব্যক্তি ৯৯৯-এ ফোন করে জানান। পরে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পেয়ে রাজবাড়ী জেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির ঈগলটিকে উদ্ধার করে সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কাছে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। চিকিৎসক জানান পাখিটি কয়েকদিন হেফাজতে রেখে চিকিৎসা করতে হবে, কিন্তু তাদের সেরকম কোন ব্যবস্থাপনা নেই।
এসময় ওই বন কর্মকর্তা ঈগলটিকে প্রকৃতিপ্রেমী হিসেবে পরিচিত লিটন চক্রবর্তীর কাছে চিকিৎসার পাশাপাশি সেবা করার জন্য হস্তান্তর করেন। লিটন চক্রবর্তী তাঁর আরাম ঘরের (শিশুদের জন্য প্রতিষ্ঠিত সাংস্কৃতিক শিক্ষা কেন্দ্র) একটি কক্ষে ঈগলটিকে রেখে দেখভাল করতে থাকেন। কয়েকদিন পর ঈগল পাখিটি কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলে সবার অগোচরে উড়ে চলে যায়।
২ মাসের বেশী সময় পর ৭ সেপ্টেম্বর হঠাৎ ঈগল পাখিটি তাঁর বাড়ির পাশে একটি ঘরের চালের ওপর এসে বসে। বিষয়টি জানতে পেরে তিনি ঈগলটি পুনরায় উদ্ধার করেন। বর্তমানে পাখিটি তাঁর আরামঘরের একটি কক্ষে রয়েছে। তবে স্বাস্থ্য কিছুটা দুর্বল হয়েছে। সুস্থতার জন্য নিয়োমিত ওষুধ চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি। ঈগলটিকে খাবার হিসাবে প্রতিদিন মাছ-মাংস দিয়ে থাকেন। ঈগলটি দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছে স্থানীয়রা।
স্থানীয় সুমন কুমার বিশ্বাস বলেন, আসলে প্রকৃতিকে ভালোবাসলে সে মানুষকেও ভালোবাসে। ঈগল এখন মানুষকে শত্রু না ভেবে বন্ধু ভাবতে শুরু করেছে। প্রকৃতিকে রক্ষা করতে হলে প্রকৃতিকে ভালোবাসতে হবে।
আরাম ঘরের সদস্য শামীম আহম্মেদ, রেজাউল কবির ও রেজোয়ান হোসেন বলেন, ‘লিটন চক্রবর্তীর মন-মানসিকতা পাখিদেরও আকৃষ্ট করেছে। যে কারণে দুই মাস পর ঈগলটি আবার ফিরে এসেছে।
লিটন চক্রবর্তী বলেন, ঈগলটি এখন অনেকটাই সুস্থ, খাবার খাচ্ছে। দিনে কয়েকবার তাকে মাছের পোনা ও রাতে মুরগির মাংস দেওয়া হয়।ঈগল মানুষ দেখলে কিছুটা ভয় পায়। সে কারণে তাকে একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। ঈগলটি দেখতে প্রতিদিন ৪০-৫০ জন মানুষ আসে।
রাজবাড়ী সামাজিক বনায়ন নার্সারী ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ হুমায়ুন কবির জানান, ৯৯৯ এ ফোন পেয়ে আমি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ঈগল পাখিটি উদ্ধার করি। পরে পাখিটিকে চিকিৎসা এবং চিকিৎসকের পরামর্শে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে লিটন চক্রবর্তীর আরাম ঘরের কাছে হস্তান্তর করি। ইতিপূর্বে পাখিটা কিছুটা সুস্থ্য হয়ে উড়ে চলে গিয়েছিল। তবে পাখিটি আবার লিটন চক্রবর্তীর কাছে ফিরে এসেছে। বিষয়টি আমি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। পাখিটি সুস্থ্য হলে পুনরায় অবমুক্ত করা হবে।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. খায়ের উদ্দিন আহমেদ বলেন, সব প্রাণীই ভালোবাসার কাঙাল। তারই একটি নিদর্শন এই ঈগল। দুই মাস পর পাখিটি আবার ফিরে এসেছে।