স্টাফ রিপোর্টার: নেত্রকোনায় গত দুদিন যাবত বন্যার পানি ধীরে ধীরে কমলেও নিম্নাঞ্চলে এখনো বন্যার পানি রয়েছে। দুর্ভোগ কমেনি। নেত্রকোনা, কলমাকান্দা, দুর্গাপুর এবং পূর্বধলা উপজেলার বন্যার্তরা দারুণ দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে।
এদিকে কলমাকান্দা উপজেলার উদ্দাখালী নদীর পানি গতকাল রোববার পর্যন্ত বিপদসীমার ওপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছিল। বন্যাদুর্গত এলাকা থেকে পানি কমলেও বাসিন্দাদের সংকট ও দুর্ভোগ এখনো কাটেনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয়রত লোকজন বাড়িঘরে ফিরলেও অধিকাংশই ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি সংস্কার করতে পারছে না। তবে এই বন্যায় জেলার চার উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গ্রামীণ সড়ক। জেলার ৬৫০ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক ডুবে এবং বিনষ্ট হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ টাকার অঙ্কে প্রায় ২০০ কোটি টাকা।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, টানা বৃষ্টি ও পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলে সম্প্রতি নেত্রকোনার কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, পূর্বধলা, বারহাট্টা ও সদর উপজেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। এতে অন্তত ২৭টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। গত মঙ্গলবার থেকে পানি কমতে শুরু হলেও এখনো বিভিন্ন রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আমন, শাকসবজির খেত ও ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়ে রয়েছে। বন্যার পানির কারণে ২১২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম এখনো বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রায় ২৮৫ কিলোমিটার গ্রামীণ কাঁচাপাকা সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগব্যবস্থা এখনো স্বাভাবিক হয়নি। পানির নিচে ডুবে আছে প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর আমন ফসল।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহান বলেন, জেলার সব নদ-নদীর পানিই দ্রুত কমছে। তবে এখনো উব্দাখালী নদীর কলমাকান্দা পয়েন্টে পানি বিপদসীমার সাত সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যেভাবে পানি কমছে, আশা করা হচ্ছে, নদীর ঐ পয়েন্টের পানিও বিপদসীমার নিচে চলে যাবে। সব মিলিয়ে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাচ্ছে।
বন্যায় জেলার সড়কপথে এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ কোটি টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এজিইডি) নেত্রকোনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলাম। তিনি জানান, জেলায় এলজিইডির আওতাধীন ৫ হাজার ৯৫৩ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ১ হাজার ৬৩৮ কিলোমিটার পিচঢালা সড়ক। বাকিগুলো সিসি, আরসিসি, মেগাডম, কার্পেটিং ও কাঁচা সড়ক। বন্যার পানিতে প্রায় ৬৫০ কিলোমিটার সড়কপথ তলিয়ে যায়। আর এখনো ২৫০ কিলোমিটার সড়ক পানির নিচে আছে। যেসব সড়ক থেকে পানি নেমেছে, সেগুলোর বিভিন্ন জায়গায় ভেঙে যাওয়ায় অধিকাংশ সড়ক ব্যবহার করা যাচ্ছে না
বন্যাদুর্গত এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ কমেনি বলে মন্তব্য করেছেন পূর্বধলার জারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম নান্টু। তিনি বলেন, কংস নদের তীরে থাকা জারিয়া-নাটেরকোনা এলাকার দুই স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে সম্পদ ও ফসলের ক্ষতি হয়েছে। অনেক গ্রামের মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় আছে। পানি কমলেও, তাদের দুর্ভোগ কমছে না। টাকার অভাবে নিম্ন আয়ের মানুষ ভেঙে যাওয়া ঘরবাড়ি থাকার উপযোগী করতে পারছে না।
জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, বন্যা পরিস্থিতি এখন উন্নতির দিকে। মানুষের কিছু দুর্ভোগ তো হচ্ছেই। তবে ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। গ্রামের যে সব সড়কের ক্ষতি হয়েছে, তা জরিপ করে দ্রুত সংস্কারের জন্য জেলা সমন্বয় কমিটিতে আলোচনা করা হবে বলেও তিনি জানান।