সম্পাদকীয়

বর্তমান বিশ্বে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে।পরিবার, সমাজ, দেশ, এমনকি সমগ্র পৃথিবীজুড়ে।আমরা প্রতিদিন টেলিভিশনের পর্দায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় বা দৈনন্দিন জীবনে এমন অনেক ঘটনার সাক্ষী হচ্ছি, যেখানে মানুষ সহনশীলতার অভাবে একে অপরের প্রতি হিংসাত্মক আচরণ করছে, সম্পর্ক ভাঙছে, এবং সামাজিক শান্তিবিঘ্নিত হচ্ছে।এই পরিস্থিতি শুধু আমাদের ব্যক্তিগত জীবনকেই নয়, পুরো পৃথিবীর ভারসাম্যকেও নষ্ট করছে।

অথচ পৃথিবীটা সত্যিই অসাধারণ সুন্দর।এর প্রকৃতি, মানুষ, প্রাণিকুল, এবং সংস্কৃতির বৈচিত্র্য আমাদেরপৃথিবীকে অনন্য করে তুলেছে।তবুও, এই সুন্দর পৃথিবীটা আজ হুমকির সম্মুখীন।আমাদের মধ্যে বিদ্যমানহিংসা, অসহিষ্ণুতা, এবং ক্ষমতার লোভের কারণে আমরা নিজেদের অবস্থান ভুলে যাচ্ছি এবং পরিবেশ ও মানুষের প্রতি যত্নশীল না হয়ে আরও ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠছি।

কিন্তু এটাই কি আমরা চাই? আমরা কি সত্যিই চাই আমাদের নিজেদের হাতে এই সুন্দর পৃথিবীটা ধ্বংস হোক? না,আমরা এটা চাই না।আমরা চাই পৃথিবীটা বেঁচে থাকুক, যেমনটি ছিল হাজার বছর আগে, তেমনই হয়ে উঠুক লক্ষ কোটি বছর পরেও।

পৃথিবীকে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও সুন্দর আশ্রয় হিসেবে রেখে যেতে হবে। আর এর জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো সহনশীলতা।সহনশীলতা মানে হলো একজন অন্যজনের মতামত, চিন্তা, এবং বিশ্বাসকে সম্মান করা। সমাজের প্রত্যেক সদস্যের অধিকার রয়েছে তার নিজস্ব ভাবনা প্রকাশের, তার নিজস্ব মতামত রাখার। কিন্তু সেই মতামতের বিরোধিতা করতে গিয়ে আমরা যখন হিংসা, ঘৃণা বা ধ্বংসাত্মক আচরণ করি, তখনই শান্তির পরিবেশে ফাটল ধরে।সহনশীলতা এই ফাটলগুলো মেরামত করতে পারে।

আমাদের উচিত নিজের মধ্যে সহনশীলতার চর্চা করা, অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি এবং অবস্থানকে বুঝতে চেষ্টা করা।পারিবারিক কলহ হোক বা সামাজিক সংঘাত, সব ক্ষেত্রেই যদি আমরা একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই,তাহলে অনেক সমস্যারই সমাধান সহজেই সম্ভব।

আমাদের প্রত্যেকের একটুখানি সহনশীলতা, একটুখানিভালোবাসা এবং একটুখানি সহানুভূতি পারে এই অস্থির পৃথিবীতে শান্তি ফিরিয়ে আনতে।আমাদের পৃথিবীটা খুবই সুন্দর প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্য, মানুষ এবং প্রাণীদের একত্রে সহাবস্থানেরএই বিশাল ক্যানভাস। এই পৃথিবীটা বাঁচিয়ে রাখতে হলে, আমাদের সবাইকে নিজের জায়গা থেকে দায়িত্বশীল হতে হবে।যেন আমাদের কর্ম, আমাদের আচরণ, আমাদের চিন্তাভাবনা কখনও পৃথিবীকে ধ্বংসের পথে না ঠেলে দেয়।

আমরা যদি আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য, শান্তিময়, এবং সুন্দর পৃথিবী রেখে যেতে চাই, তবে সহনশীলতার চর্চা করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। পৃথিবী বেঁচে থাকুক, আমরা বেঁচে থাকি; পৃথিবী হয়ে উঠুক আরও সুন্দর, আরও প্রাণবন্ত, লাখো কোটি বছর ধরে।

Scroll to Top