সোহেল হোসেন: মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায় জাহাঙ্গীর নামের এক প্রবাসীর জায়গায় নির্মিত ঘর অবৈধভাবে ভেঙে ফেলার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীর পরিবারের দাবি, তাঁদের অনুপস্থিতি চেয়ারম্যান পরিষদের গ্রাম পুলিশ (চকিদার), ইউপি সদস্য ও অনুসারীদের নিয়ে ঘরের টিনের চাল, বেড়া ভেঙে ফেলেছে, নষ্ট করেছে অনেক আসবাবপত্র।
শুক্রবার (১ মার্চ) দুপুরে উপজেলার তিল্লী বাজার এলাকায় পাশে তিল্লী গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। তিল্লী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শরীফুল ইসলাম ওরফে ধলা, ইউপি সদস্য মোঃ মনির হোসেন(২ নং ওয়ার্ড), মোঃ আলগীর হোসেন(৩ নং ওয়ার্ড), মোঃ বাহের খান (৩ নং ওয়ার্ড)সহ ইউনিয়ন পরিষদের সকল গ্রাম-পুলিশ(চকিদার) সদস্যরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, তিল্লী বাজারের পাশে তিল্লী গ্রামের বাসিন্দা প্রবাসী জাহাঙ্গীর বাড়ির সামনের ইট-সলিংয়ের রাস্তায় চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্যসহ তাঁদের অনুসারীরা বসে আছেন। ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় লোকজনদের সঙ্গে চেয়ারম্যানের কথা কাটাকাটি হচ্ছে। অন্যদিকে গ্রাম-পুলিশদের সঙ্গে
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রবাসী জাহাঙ্গীর তার বাবা প্রায় ৫০ বছর আগে ওই ৩১ শতক জমি ক্রয় করে বসবাস করে আসছেন। তবে তাঁর বাড়ি সামনে দিয়ে একটি রাস্তা হয়ে অনেক বছর আগে, রাস্তাটিও তাদের ক্রয়কৃত জমির উপর দিয়েই করা হয়েছিল। ওই রাস্তার পাশেই সরকারি খাস জমিও রয়েছে, যা খাল বা ডোবা ছিল। বাড়ির সমানের ওই জয়গাটি দীর্ঘদিন ধরে ভুক্তভোগীর পরিবার ভোগদখলে করে আসছে। প্রবাসীর নির্মাণ করা ঘরের পেছনে জয়গাটি একই গ্রামের ওহাব আলী। সম্প্রতি জায়গাটিতে মাটি ফেলে ভরাট করায় সবার নজরে আসে এবং নির্মাণ করা ঘর ভেঙে দেওয়ার জন্য পিছনের জমির মালিক ওহাব আলী চেয়ারম্যান, মেম্বারদের (ইউপি সদস্য) কিছু টাকা দেয়। এ জন্য তারা ওই ঘর আজকে ভেঙে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীর পরিবার ও স্থানীয় প্রতিবেশীরা।
অন্যদিকে চেয়ারম্যানের ভাষ্য, যে জায়গায় জাহাঙ্গীরের পরিবার ঘর নির্মাণ করেছে ওই জায়গাটি সরকারি খাস-খতিয়ানভুক্ত ও ইউনিয়ন পরিষদের। সরকারি জায়গা দখল করে কেউ যাতে ঘর নির্মাণ করতে না পারে সেজন্য ভুক্তভোগীর পরিবারদের ঘরটি সরিয়ে নেওয়ার জন্যও দুইবার নোটিশও দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগী জাহাঙ্গীরর স্ত্রী সুবর্ণা আক্তার বলেন, ‘আমি বাড়িতে ছিলাম না, আমার প্রতিবেশিদের মাধ্যমে জানতে পারি, চেয়ারম্যান লোকজন নিয়া আইসা আমাগো ঘর ভাঙতাছে। খরব পেয়ে এসে দেখি, ঘরে বেড়া ও চাল খুলে রাস্তার পারে রাখছে। ঘরটি তালা দেওয়া ছিল, ঘরে ভেতরের সব জিনিসপত্র ফেলে দিছে। চেয়ারম্যান অন্যায়ভাবে আমাগো ঘর ভাইঙ্গা দিল। এখন আমার ক্ষতিপূরণ কে দিবে। আমরা তো ওই জায়গা অনেক আগে থেকেই ভোগদখলে আছি।’
প্রত্যক্ষদর্শী পারভীন বেগম বলেন, ‘চেয়ারম্যান চকিদার (গ্রাম-পুলিশ) নিয়া আইসা আমার ঝাঁও (ভাসুরের স্ত্রী) এর ঘর ভাঙতে আইছে(আসছে), পরে আমরা বলছি, আগে জায়গা মাইপা(পরিমাপ) নেন, আপনাগো রেকর্ডের জায়গা ওই পাশ দিয়া, এই রাস্তাও আমাগো জয়গার উপর দিয়া গেছে। রাস্তা করবেন, আগে আমাগো জায়গা বুঝায়ে দিয়ে তার পর করেন। ভেঙে দিছে। আমরা মহিলা মানুষ, বাঁধা দিলেও তারা আমাগো কথা শুনে নাই। উল্টো চেয়ারম্যান আমাকে বলে, বেয়াদব মহিলা, এখান থেকে হরলা (সরে) না, আমাকে ধামকি দিয়ে সরিয়ে দিছে।
প্রবাসী জাহাঙ্গীরের মা মেহেরুন নেসা বলেন, ‘আমারা নিরীহ মানুষ দেইখ্যা অন্যরা জোড় কইরা আমাগো জায়গার ঘর চেয়ারম্যান ভাইঙগা দিলো। মালিকানা জায়গায় ঘর করছি, চেয়ারম্যান সুলতানের কাছ থেকে টাকা খাইয়া এই কাম করলো। বাঁধা দিতে গেলে আমাগো ধমকিয়ে সরায়ে দিছে।
এ বিষয়ে তিল্লী ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শরীফুল ইসলাম বলেন, রাস্তার পাশের এই জায়গাটি সরকারি। সেখানে তারা ঘর নির্মাণ করেছে, সরকারি জায়গা দখল করে যাতে কেউ ঘর তুলতে না পারে সেজন্য তাদের বাঁধা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ঘরটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য দুই বার নোটিশও করা হয়েছে। এই জায়গাটি নিয়ে এখানকার দুইপক্ষের মধ্যে বিরোধও রয়েছে। নিজে উপস্থিত থেকে ইউপি পরিষদের গ্রাম-পুলিশ ও লোকজনদের দিয়ে নির্মাণ করা প্রবাসী জাহাঙ্গীরের ঘর ভাঙতে পারেন কিনা? এমন প্রশ্ন করতে বিষয়ে এড়িয়ে গিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, সরকারি জায়গা যাতে বেদখল কেউ না করতে পারে সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে।