মানিকগঞ্জে ট্রাফিক পুলিশের নামে চলে অটো রিক্সা

মানিকগঞ্জে ট্রাফিক পুলিশের নামে চলে অটো রিক্সা

সত্য সংবাদ ডেক্স রিপোর্ট: মানিকগঞ্জে আইন অমান্য করে ব্যাটারী চালিত অটো রিক্সা চলাচল করায় যানজটে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নাগরিকদের। পৌর কতৃপক্ষের অনুমতির তোয়াক্কা না করে রেজিষ্ট্রেশনবিহীন এসব অটো রিক্সা শহরের প্রধান প্রধান সড়কে বেপরোয়া গতিতে চলাচল করায় প্রায় প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা। এছাড়া ট্রাফিক আইন না মেনে যত্রতত্র পাকিং এবং যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ নানা অভিযোগ রয়েছে অনবিজ্ঞ অটো রিক্সার চালকদের বিরুদ্ধে।

এদিকে মোবাইল কোর্টের নামে অটো রিক্সা আটকে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া সহ জেলা ট্রাফিক পুলিশের কিছু সদস্যের নামে অটো রিক্সা চলাচল করার অভিযোগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে রিক্সা চালকরা। জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, মানিকগঞ্জ পৌরসভার মেয়র বরাবর লিখিত অভিযোগের অনুলিপি দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, জেলা ট্রাফিক পুলিশের এটিএসআই মেহেদীর নামে ১৫০টি, এটিএসআই ইমরুলের নামে ৪০টি, এটিএসআই কুদ্দুসের নামে ৬০টি, এটিএসআই হাবিবের নামে ৬০টি ও এটিএসআই আজিজুলের নামে ৫০টি অটো রিক্সা চলাচল করে। পুলিশের নামে চলাচল করা এসব অটো রিক্সা ছাড়া যেসব রিক্সা শহরের ভেতর প্রবেশ করেন তাদের প্রতি মাসে পুলিশকে দিতে হয় দুই হাজার টাকা। আর যেসব চালকরা এ্র বাইরে থাকেন তাদের রিক্সা আটক করলেই এক হাজার টাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রিক্সা চালকেরা জানিয়েছেন, পুলিশের নামে যেসব অটো রিক্সা চলে সেগুলো ছাড়া কোন রিক্সা শহরে প্রবেশ করলেই তা আটক করে এস, কে সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশের একটি খালি জায়গায় ড্রাম্পে নিয়ে গিয়ে সেখান থেকে এক হাজার টাকার বিনিময়ে আটক করা রিক্সা ছেড়ে দেওয়া হয়। ট্রাফিক পুলিশের এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে চালকদের উপর জুলুম নির্যাতন সহ তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে থাকেন।

কয়েকজন রিক্সার চালক  বলেন, আমরা যারা রিক্সা চালাই তারা নিম্ন আয়ের গরীব মানুষ। অনেকের বাড়িতে কাজ না থাকায় রিক্সা ভাড়া নিয়ে চালিয়ে কোন রকমে সংসার চালাই। কিন্তু পুলিশ আমাদের নানা ভাবে অত্যাচার করে। পৌরসভা থেকে আমাদের রিক্সার রেজিষ্ট্রেশন করে দিলে পুলিশের ভোগান্তি থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পেতে পারি।

সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মানিকগঞ্জ জেলা শহরের প্রধান সড়ক হিসেবে পরিচিত শহীদ রফিক সড়ক, বেউথা থেকে সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, জেলা প্রশাসকের বাসভবন থেকে বাসষ্ট্যান্ড এলাকা পোড়রা খামার বাড়ি থেকে খালপাড় ব্রীজ, জরিনা কলেজ থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সহ গুরুত্বপুর্ন সব সড়ক এবং পৌরসভার আশপাশে যেখানে সেখানে যত্রতত্র চোঁখে পড়ছে শতশত ব্যাটারী চালিত অটো রিক্সা। পৌর কতৃপক্ষের অনুমতি এবং রেজিষ্ট্রেশন না থাকলে ট্রাফিক পুলিশের সামনে দাঁপিয়ে বেড়ানো এসব অটো রিক্সায় লাগানো উচ্চমাত্রার অবৈধ এলইডি লাইটের আলোর কারনে বিপরীত দিক থেকে যানবাহন চালকদের রাস্তা না দেখতে পেয়ে দুর্ঘটনার স্বীকার হওয়া সহ নানা সমস্যায় পড়তে হয়।

মানিকগঞ্জ পৌরসভার ল্ইাসেন্স পরিদর্শক সায়েদুর রহমান জানান, ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে পৌরসভার ভেতরে চলাচলের জন্য ৭২০ টি হ্যালোবাইকের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাস পর্যন্ত নবায়ন হয়েছে ৪৯০টি। তবে এগুলোর মধ্যে ব্যাটারী চালিত অটো রিক্সা চলাচলের কোন অনুমতি নেই। যেগুলো চলছে তা অবৈধ ভাবে পুলিশকে ম্যানেজ করে চলতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

মানিকগঞ্জ জেলা ট্রাফিক পুলিশের ট্রাফিক পরিদর্শক মেরাজ উদ্দিন বলেন, অটো চালকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আটককৃত রিক্সা ছেড়ে দেওয়া এবং ট্রাফিক পুলিশের নামের অটো রিক্সা চলাচল করার অভিযোগের বিষয়টি সত্য নয়। এই ধরনের অপকর্মের সঙ্গে কোন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যে জরিত থাকলে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মানিকগঞ্জ পৌরসভার প্যাণেল মেয়র-২ এবং পৌর এলাকার বিভিন্ন রাস্তার যানজচ নিরসন, অবৈধ যানবাহন ও ভ্রাম্যমাণ অপসারণ সক্রান্ত কমিটির সভাপতি মো. তসলিম মিয়া বলেন, এতদিন হেলোবাইকের রেজিষ্ট্রেশন পৌরসভার আওতায় থাকলেও অটো রিক্সা রেজিষ্ট্রেশনের আওতায় ছিল না। গত মাসিক সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী অর্থ বছর থেকে ব্যাটারী চালিত অটো রিক্সা পৌরসভার রেজিষ্ট্রেশনের আওতায় আনা হবে। শুরুতে অটো রিক্সার নবায়ন ফি ধরা হয়েছে ২০০০ টাকা।

তিনি আরো বলেন, নতুন অর্থ বছর থেকে পৌরসভার রেজিষ্ট্রেশন ছাড়া কোন হেলোবাইক এবং অটো রিক্সা শহরে চলাচল করতে পারবে না। এরপর যদি কোন চালক পৌরসভার রেজিষ্ট্রেশন না দিয়ে তাদের রিকসা রাস্তায় নামায় তাহলে শহরকে যানজট মুক্ত রাখতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে শাস্তির আওতায় আনা হবে।

মানিকগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. রমজান আলী বলেন, অবৈধ যানবাহনের পাশাপাশি শহরের ভেতর অবৈধ ভাবে ভ্রাম্যমান দোকান বসিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছেন তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে। যানজট নিরসন কমিটির সদস্যদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, রেজিষ্ট্রেশন বিহীন কোন যানবাহন রাস্তায় বের হলে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। তবে এই কাজে পুলিশ এবং জেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

Scroll to Top