নিজস্ব প্রতিবেদক:মানিকগঞ্জ জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে বদলী বাণিজ্য,নারী কেলেংকারী সংক্রান্ত বিষয় সহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয় অধিদপ্তরের পরিপত্রকে বুরো আঙ্গুল দেখিয়ে সরকারী এই কর্মকর্তা ক্ষমতার অপব্যবহার করে সদর উপজেলার ফৌজিয়া মালেক মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রের একটি কক্ষ নিজের দখলে রেখে ব্যবহার করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে পরিবার ও পরিকল্পনা অধিদপ্তর এবং জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে নিজ অফিসের এক ভুক্তভোগী।
অথচ পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর অধিদপ্তরের উপপরিচালক(পার্সোনেল) জালাল উদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত এক আদেশ কপিতে স্পষ্ট নির্দেশণা রয়েছে জেলা ও উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ অফিস কক্ষ সমূহে নিজেদের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা যাবেনা।
২০২২ সালের ১০ অক্টোবর জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান আনুষ্ঠানিক ভাবে যোগদান করেন। এরপর থেকে তার বিরুদ্ধে উঠে বদলী বানিজ্য,নারী কেলেংকারী সহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ।
অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, মো. মনিরুজ্জামান অধিদপ্তরের পরিপত্রকে বুরো আঙ্গুল দেখিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সদর উপজেলার ফৌজিয়া মালেক মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রের চারতলার একটি কক্ষ নিজের দখলে রেখে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করছেন এবং মেটারনিটি সংলগ্ন মসজিদের দুই টনের জেনারেল এসি তিনি আরাম আয়েসের জন্য নিজ রুমে বসিয়েছেন। মেটারনিটি হাসপাতালের ভেতর বহিরাগতদের গাড়ি অবৈধ ভাবে পাকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া, বিভিন্ন কৌশলে উপজেলা,ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বদলী বাণিজ্য করা এবং পরিবার, পরিকল্পনা সংক্রান্ত কোন অনুষ্ঠানে উপজেলা,ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায় থেকে যেসব জনপ্রতিনিধিরা আসেন তাদের যথাযথ মুল্যায়ন না করে র্দুব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া প্রায় দেড় বছর আগে গঙ্গাধরপট্টি এলাকায় ভাড়া অফিসে নিজ নারী সহকর্মীকে জরিয়ে ধরে অশ্লীলতা করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পরে লাজলজ্জার ভয়ে স্থানীয়রা নারী সংক্রান্ত বিষয়টি মিটমাট করে ফেলেন।
আজ সোমবার দুপর দুইটার দিকে মেটারনিটি হাসপাতালের চতুর্থ তলায় পশ্চিম পাশে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের এক পরিছন্ন কর্মী মনিরুজ্জামানের থাকার কক্ষটি ধোয়ামোছার মাধ্যমে পরিস্কার করছেন। কক্ষের ভেতরে ফ্রিজ,মাইক্রোওভেন,সোফা,বিলাশবহুল খাট,স্মার্ট টিভি,স্টীলের আলমারি,ড্রেসিং টেবিল সহ আরো অনেক ব্যবহারিক আসবাপপত্র রয়েছে। মেটারনিটি হাসপাতালের নামাজের স্থানের এসি তিনি আরাম আয়াসের জন্য ওই রুমে বসিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেটারনিটি হাসপাতালের বেশ কয়েকজন কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,সদরের ফৌজিয়া মালেক মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রের দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসার ডা. জেরিন সুলতানার বিষয়টি জানা থাকলেও তিনি কিছ সুবিধা ভোগ করা এবং নিজের অন্যত্র বদলীর ভয়ে অনিয়মের বিষয়ে কিছু বলেন না। মেটারনিটি হাসপাতালটিতে প্রসুতী নারীদের ২৪ ঘন্টা সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও প্রতিদিন দুপুর একটার পরে কোন রোগী প্রসব বেদনা নিয়ে উপস্থিত হলে তা না করে সিজারের কথা জানিয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এছারা মেটারনিটি হাসপাতালে দালালের দৌরাত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পেলেও শীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবে মনিরুজ্জামান কোন প্রদক্ষেপ নেন না।
এ বিষয়ে ফৌজিয়া মালেক মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা মেডিক্যাল অফিসার (ক্লিনিক) ডা. জেরিন সুলতানার কাছে জানতে চাইলে তিনি মেটারনিটি হাসপাতালের চতুর্থ তলার একটি কক্ষে মো. মনিরুজ্জামান খানের থাকার কথাটি স্বিকার করে বলেন যেহেতু ডিডি স্যার তার নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তা এব্যাপারে তিনি কোন বক্তব্য না দিয়ে তার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পরিবার,পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান খান বলেন, সকল আইন-কানুন মেনে তিনি ফৌজিয়া মালেক মা ও শিশু পরবার কণ্যাণ কেন্দ্রের চতুর্থ তলার কক্ষে বসবাস করছেন। অন্যসব অভিযোগ সঠিক না বলে জানান তিনি। তবে অফিসের নারী সহকর্মীর সঙ্গে অশ্লিলতা বিষয়ে জানতে চাইলে বিষয়টি নিয়ে মুঠোফোনে কথা বলতে চাননি।
জেলা প্রশাসক রেহেনা আকতার বলেন, অভিযোগের কোন কপি এখনো আমার হাতে এসে পৌছেনি । অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।