নিজস্ব প্রতিবেদক: মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায় প্রবাসীর সম্পত্তি ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুতি জানিয়েছেন গ্রীস প্রবাসী সায়েম খানে মা ও তাঁর পরিবার। চাদাঁ না দেয়ায় সদর উপজেলার ভাড়ারিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা কে এম ফিরোজ এর সহযোগীতায় স্থানীয় প্রভাবশালী মোস্তাফার বিরুদ্ধে গ্রীস প্রবাসী সায়েম খান এবং ফ্রান্স প্রবাসী হোসেন খানের দোকান ঘর ভাংচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত বছরের ১৯ আগস্ট দুপুরে সদর উপজেলার বলড়া বাজারের ভাড়ারিয়া বাজার অংশে এই দোকান ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। হরিরামপুর উপজেলার বলড়া এলাকার কুতুমদ্দিনের ছেলে মোস্তাফা এবং ভাড়ারিয়া ভূমি অফিসের ভূমি কর্মকর্তা কে এম ফিরোজ অন্যায়বাবে এই দোকানঘর ভাঙচুর করেছে বলে দাবি করে ভুক্তভোগি প্রবাসী সায়েম খানের মা জহুরা বেগম এবং তার পরিবার। প্রবাসী সায়েম খান ও হোসেন খান বলড়া এলাকার তৈয়ব আলীর ছেলে।
জানা গেছে, জহুরা বেগমের প্রবাসী দুই ছেলে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ভাড়ারিয়া বাজারে রামকৃষ্ণ পোদ্দারের ওয়ারিশ থেকে পাওয়া সম্পত্তি থেকে দুই শতাংশ জায়গা ক্রয় করেন। পরে সেখানে কয়েক লাখ টাকা খরচ করে সিমেন্টের খুটি ও কাঠের পাটাতন দিয়ে দোকান ঘর নির্মাণ করেন। এসময় স্থানীয় প্রভাবশালী মোস্তাফা দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে জহুরা বেগমের কাছে। সেই টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় মোস্তাফা ভাড়ারিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা কে এম ফিরোঝের সহযোগিতায় গত বছরের ১৯ আগস্ট দুপুরের দিকে ওই দোকান ঘর ভেঙে দেওয়া হয়। পরদিন ২০ আগস্ট জহুরা বেগম জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। নিজের সম্পদ রক্ষার্থে ২৪ আগস্ট সায়েম খান গ্রীসের এথেন্সে বাংলাদেশ দূতাবাসে আইনি সহায়তা চেয়ে আবেদন করেন। পরে দূতাবাস থেকে বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে অবগত করা হয়। এই সঙ্গে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারকে প্রাবাসী সায়েম খানের আবেদনটি পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়।
অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার ভাড়াড়িয়া মৌজার আরএস ৬৭৯ নং খতিয়ানের ২৮৪৬ নং দাগের ৮ শতাংশ জমির মালিক ছিলেন রমনী মোহন পোদ্দার । তিনি মারা যাওয়ার পর তার ওয়ারিশ হিসেবে তার পুত্র রামকৃষ্ণ পোদ্দার গ্রীস প্রবাসী সায়েম খান এবং ফ্রান্স প্রবাসী হোসেন খানের নিকট ৫৫৪৭/২২ নং দলিলের মাধ্যমে ২ শতাংশ জমি বিক্রয় করেন। পরে সায়েম খান ও হোসেন খান নামজারি ও জমাভাগ কেস নং ২১০৪/২২-২৩ মূলে মালিক হয়ে খাজনাদি পরিশোধ করে ভোগদখল করেন। সেখানে সিমেন্টের খুঁটি ও কাঠের পাটাতন দিয়ে দোকান ঘর নির্মাণ করেন। এ সময় স্থানীয় প্রভাবশালী মোস্তফা দুই লক্ষ টাকা চাদাঁ দাবী করেন। চাদাঁ না দেয়ায় ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে সাথে নিয়ে গত বছরের ১৯ আগস্ট দুপুরে ১০/১৫ জন লোক নিয়ে দোকানঘরটি ভাংচুর করা হয়। এসময় স্থানীয়রা বাধাঁ দিতে গেলে ভূমি কর্মকর্তা ফিরোজ জানায় কোর্টের অর্ডার আছে। কোর্টের অর্ডারের নোটিশ দেখানোর জন্য বলা হলে প্রবাসী দ্বয়ের পরিবারে লোকজনকে ভয়ভীতি দেখালে আর কেউ বাঁধা দেয়নি।
এ বিষয়ে অভিযোগকারী জহুরা বেগম জানান, ছেলেদের কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে ওই জয়গা কিনেছি। সেখানে দোকান ঘর দেওয়ার সময় আমার কাছে চাঁদা চায়। সেই টাকা(চাঁদা) না দেয়ায় দোকান ঘর অন্যায়ভাবে ভাঙচুর করেছে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। তবে এখনো সুষ্ঠ বিচার পাইনি। প্রশাসন এই ঘটনার সঠিক বিচার করবেন বলে তিনি দাবী করেন।
স্থানীয়রা জানান, সায়েম খান ওই জায়গা রেকর্ডীয় মালিকের নিকট থেকে কিনেছে। সেখানে দোকানঘরও নির্মাণ করেছিলো। তবে ভূমি কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রভাবশালী মোস্তফা লোকজন নিয়ে সেই দোকানঘর ভেঙে দিছে। ভূমি কর্মকর্তার কাছে শুনেছি, ওই জায়গা নাকি সরকারী খাস জায়গা। দোকান ঘর ভাঙার সময় মাইকিং বা নোটিশও করে নাই। কিন্তু এইভাবে একজনের দোকানঘর আরেকজন অন্যাভাবে ভাঙচুর করেছে এটা ঠিক করে নাই। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়া দাবি করেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মোস্তফা বলেন, তারা(সায়েম খান) যেখানে দোকান ঘর নির্মাণ করেছে, সেই জায়গা সরকারি খাস। আমি সচেতন নাগরিক হয়ে সরকারি খাস জায়গা দখলমুক্ত করার জন্য একটি আবেদন করেছিলাম। এটিই আমার অপরাধ। কে বা কারা তাদের দোকান ঘর ভাঙচুর করে তা আমি জানিও না, তাদের চিনিও না। দুই লাখ টাকা চাঁদা চাওয়া বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
ভাড়ারিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা কে এম ফিরোজ জানান, প্রবাসী সায়েম খানের পরিবার যেখানে দোকান নির্মাণ করেছেন সেটা সরকারি খাস জায়গা। দোকান ঘর নির্মাণের খবর পেয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে পুলিশ প্রশাসনকে সাথে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের বাধা দেয়া হয়। পরে কে বা কারা তাদের দোকান ভাংচুর করেছে তা জানেন না বলেও জানান তিনি।