নিজস্ব প্রতিবেদক:মানিকগঞ্জের ঘিওরে নালী ইউনিয়নের বাঠইমুড়ি এলাকায় আব্দুুর রশিদ নামের এক প্রতিবন্ধী (অন্ধ) ব্যক্তির ঘরের সামনে বেড়া দিয়ে ঘরে ঢোকার রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে প্রভাবশালী মনজুর আলম খান। এতে অন্ধ আব্দুর রশিদ ও তার পরিবারের লোকজন ওই ঘরে প্রবেশ করতে না পেরে দীর্ঘক্ষণ অনাহারে কাটায়।
বুধবার সকালে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে কলতা উভয়াচরণ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও নালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মনজুর আলম খান প্রতিবন্ধী আব্দুর রশিদের ঘরের সামনে বেড়া দিয়ে ঘরে প্রবেশের রাস্তা বন্ধ করে দেয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার নালী ইউনিয়নের বাঠইমুড়ি এলাকার আব্দুর রশিদের বাড়িতে বাঁশ দিয়ে বেড়া দিয়ে ঘরে ঢুকার দরজা ও পায়খানা আটকে দিয়েছে মনজুর আলম খান। ঘরে ঢুকতে না পেরে আব্দুর রশিদের পরিবারের লোকজন অভুক্ত অবস্থায় বিলাপ করছে।
আব্দুর রশিদের ছেলে মোঃ রতন মিয়া বলেন, আমরা গরীব মানুষ, হাতে এখন টাকা পয়সা নেই। এজন্য ঘর সরিয়ে নিতে এক মাস সময় চেয়েছিলাম। এ বিষয়ে আলম খানকে জানালে তিনি স্ট্যাম্পে সই করতে বলেন। স্ট্যাম্পে সই না করার কারণে কোন কিছু না বলেই হঠাৎ করে ১৫-২০ জন লোক নিয়ে এসে জোরপূর্বক আমাদের ঘরের সামনে বেড়া দেয়।
আব্দুর রশিদের বৃদ্ধ মা সোনা বানু জানান, ঘরের সামনে বেড়া দেওয়ার কারণে আমাদের নাওয়া -খাওয়া সব বন্ধ হয়ে গেছে। বেড়া দেওয়া ওই ঘরের ভেতরে খাবার রয়েছে। কিন্ত বেড়ার কারণে কারণে ঘরে যেতে পারছিনা। সকাল থেকে আমরা না খেয়ে আছি।
একই পরিবারের পুত্রবধূ সাজেদা আক্তার বলেন, আমার ছোট একটা বাচ্চা আছে,ওরে নিয়া কই যামু । খাওয়া-দাওয়া সব বন্ধ হইয়া গেছে আমাগো।
এ বিষয়ে প্রতিবেশীদের সাথে কথা বললে তারা জানান, গরিব মানুষগো এরকম সুযোগ না দিয়া এমনটা করা ঠিক হয় নাই। আইনের কথা জানিনা, তয় সামাজিকভাবে এইটা খুব খারাপ হয়ছে।
এ বিষয়ে জানতে ঘিওর থানার অফিসার ইনচার্জ সুকুমার বিশ্বাসের মুঠোফোনে জানানো হলে তিনি স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন।
এরপর কিছুক্ষণের মধ্যে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস মধু ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় আব্দুর রশিদের ঘরের সামনের বেড়া উচ্ছেদ করেন।
এ বিষয়ে নালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস মধু বলেন, কাজটি অমানবিক হয়েছে । আমি ইউএনও এবং ওসি স্যারের সাথে কথা বলেছি। তাদের নির্দেশে এটি আপাতত উচ্ছেদ করা দেওয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে তারা যদি জায়গা পায় সেক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে মনজুরুল আলম খানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমার জায়গা বুঝিয়ে দেয়ার জন্য তাদেরকে বারবার বলেছি। ঘর সরিয়ে ফেলার জন্য অনেকবার সময়ও দিয়েছি। কিন্ত তারা কোনো কথাই শুনেনা, তাই বেড়া দিয়েছি। বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যানকে জানিয়েছেন কি’না প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমি কেনো চেয়ারম্যানকে জানাবো? চেয়ারম্যানকে জানানোর প্রয়োজন হলে ওরা জানাবে।