বাংলাদেশের আলোকিত বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব তাজউদ্দিন আহম্মদ

বাংলাদেশের আলোকিত বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব তাজউদ্দিন আহম্মদ

সত্য সংবাদ ডেক্স:তাজউদ্দিন আহমদ বাংলাদেশের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, এমপি, মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন যা ‘মুজিবনগর সরকার’ নামে অধিক পরিচিত। স্বাধীনতার পর তিনি দেশের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী হিসেবে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর তিনি ও আরো জাতীয় তিন নেতাকে বন্দী অবস্থায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ১৯৭৫ সালে ৩রা নভেবর নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। 

তিনি ১৯২৫ সালে ২৩ জুলাই গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার দরদরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম মৌলবী মোঃ ইয়াসিন খান ও মাতা মেহেরুন্নেসা খান। 

তিনি গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া থানার ভুলেশ্বর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেনীতে ভর্তি হন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেনীতে বার্ষিক পরীক্ষায় তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন। এরপর তিনি কাপাসিয়া মাইনর ইংরেজী স্কুলে ৪র্থ শ্রেনীতে ভর্তি হন। তিনি ১৯৪৪ সালে জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডে দ্বাদশ স্থান অধিকার করেন। একই কলেজ থেকে তিনি ১৯৪৬ সালে ঢাকা বোর্ডে ৪র্থ স্থান অধিকার করেন ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯৫০ সালে অর্থনীতিতে অনার্সসহ স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৬৪ সালে বন্দী অবস্থায় জেলে বসে তিনি এলএলবি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে কৃতিত্বের সাথে পাস করেন।

আবুল হাশেমী প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি ১৯৪৩ সালে মুসলিম লীগে যোগদান করেন। ১৯৪৪ সালে তিনি বঙ্গীয় মুসলিম লীগের কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হন। 

১৯৪৮ সালে ৪ জানুয়ারী তিনি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ (বর্তমানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ) প্রতিষ্ঠার অন্যতম নেতা ছিলেন । একই সালে ১১ মার্চ ও ১৩ মার্চ সর্বদলীয় ছাত্র সগ্রাম পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে ধর্মঘট কর্মসূচী ও বৈঠক করেন। ২৪ মার্চ রাষ্টভাষা বাংলা নিয়ে জিন্নাহ সাহেবের সাথে সর্বদলীয় রাষ্টভাষা বাংলার নেতারাসহ তিনি বৈঠক করেন। তিনি ১৯৪৯ সালে ২৩ জুন প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনে অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন। 

১৯৫৩ -১৯৫৭ সাল পর্যন্ত তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগের ঢাকা জেলার সাধারন সম্পাদক ছিলেন। ১৯৫৫ সালে আওয়ামী মসলিম লীগের নাম পরিবর্তিত হয়ে হয় আওয়ামীলীগ। ১৯৫৪ সালে নির্বাচনে তিনি যুক্তফ্রণ্ট প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদককে পরাজিত করে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি  ১৯৬৪ সালে প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালে ৮ মে দেশরক্ষা আইনে গেফতার হন তিনি। ১৯৬৮ সালে জেল থেকেই তিনি পুনরায় আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন।

‘৬৯ এর গণঅভ্যুথানের জন্য তিনি মুক্তি পান। ১৯৭০ সালে তিনি পুনরায় আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন। এই একই বছর তিনি আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারী বোর্ডের সেক্রেটারী নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালে ৭ ডিসেম্বর নির্বাচনে তিনি জাতীয় পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন।

বিপুল  ভোটের ব্যবধানে জয় লাভের পরও ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করেন। শেখ মুজিব অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়। ২৫ মার্চ রাতে শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিকে ঐ দিন রাতে পাকিস্তান সেনাবাহীনি গণহত্যা শুরু করে। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। তিনি আত্মরক্ষা, প্রস্তুতি ও পাল্টা আক্রমণ এই তিনটি বিষয় মাথায় নিয়ে যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি আত্মগোপন করেন। তিনি ব্যারিষ্টার আমিরুল ইসলামকে সংগে নিয়ে ভারতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। ১৯৭১ সালে ৩১ মার্চ মেহেরপুর অতিক্রম করে  ভারত সীমান্তে পৌঁছান। বিএসএফ এর মহাপরিদর্শক গোলক মজুমদার তাজউদ্দিন ও ব্যারিষ্টার আমিরুল ইসলামকে যথাযোগ্য মর্যাদায় নিরাপদ আশ্রয়স্থলে নিয়ে যায়। ভারতে অবস্থান করে বাংলাদেশের মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি দৃঢ়তার সাথে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছেন। স্বাধীনতার পর পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে আসার পর প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান তাজউদ্দিন আহম্মদ। এরপর তিনি অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহন করেন। ১৯৭৩ সালে ঢাকা-২০ আসন ( বর্তমানে গাজীপুর-৪)  থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। 

১৯৭৫ সালে ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সকল সদস্যকে (শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনা ব্যতীত) হত্যা করার পর ৩রা নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয় তাজউদ্দিনসহ জাতীয় ৪ নেতাকে ।

Scroll to Top