বালিয়াটী জমিদার বাড়ীর আদ্য-প্রান্ত

বালিয়াটী জমিদার বাড়ী

সত্য সংবাদ ডেক্স: মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় বালিয়াটী জমিদার বাড়ীটির গোড়াপত্তন হয় ১৭৯০ সালে| জমিদারদের পূর্ব পুরুষ ধনাঢ্য লবণ ব্যাবসায়ী গোবিন্দ রায় সাহা বাড়ীটির নির্মান কাজ শুরু করেন।

পর্যায়ক্রমে বাড়ীটির নির্মান কাজ সম্পন্ন করা হয়। বাড়ীটি এখন গণপূর্ত মন্ত্রণায়ের অধীনে গণপূর্ত বিভাগে ন্যাস্ত। বর্তমানে এটি সরকারী যাদুঘর ও সরকারী পর্যটন কেন্দ্র। বালিয়াটীর জমিদার ছিলেন বাবু কিশোরী লাল রায় চৌধুরী ও বাবু হীরালাল রায় চৌধুরী। গেবিন্দ রায় সাহা ছিলেন এদেরই পূর্বপুরুষ।

১৯ শ শতকের প্রথম দিক হতে ২০ শ শতকের প্রথম দিক পর্যন্ত প্রায় ১০০ বছর জমিদারী করেন এরা।

জমিদার কিশোরী লাল রায় চৌধুরী তার পিতার নামে রাজধানী ঢাকায় ১৮৮৪ সালে জগন্নাথ কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন যা বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৮৮৭ সালে নিজ নামে কিশোরীলাল জুবিলী হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী পড়াশুনা করে। তিনি (কিশোরীলাল) ১৯২৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন। এই জমিদারদের বংশধররা বহু কৃর্তি রেখে গেছেন।

জমিদদারদের বংধররা সকলেই ভারতে চলে গেছেন। এই বাড়ীটি এখন গণপূর্ত মন্ত্রণায়ের অধীনে গণপূর্ত বিভাগে ন্যাস্ত।

গণপূর্ত বিভাগ দায়িত্ব নিয়েই বাড়ীটিকে যাদুঘর ও পর্যটন কেন্দ্র বানিয়েছে। এতে একদিকে সরকার পাচ্ছে রাজস্ব আর দেশি-বিদেশি ভ্রমণ পিপাসুরা এখানে প্রতিনিয়ত ঘুরতে আসছে। ফলে এলাকায় জমে উঠেছে বিভিন্ন ব্যাবসা। 

রবিবার পর্ণ দিবস ও সোমবার অর্ধ দিবস সাপ্তাহিক বন্ধ থাকে এই যাদুঘর ও পর্যটন কেন্দ্র। এই বাড়ীটি ৫.৮৮ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। বাড়ীটিতে প্রাসাদসম ৭ টি স্থাপনায় ২০০ টি কক্ষ আছে। বাড়ীটির ভিতরে একটি পুকুর আছে ও পুকুরে ৭ টি ঘাটলা ছিল, এখন আছে ৬ টি। ঘাটলাগুলিও শান বাঁধানো ও নান্দনিক। জমিদারদের বংশধররা বাড়ীটি পর্যায়ক্রমে নির্মান করেছেন।   

এটি মানিকগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ৮ কিমি উত্তর-পূর্বে এবং রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ৫০ কিমি উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত।

বালিয়াটির জমিদারদের পূর্বপুরুষ গোবিন্দ রায় সাহা ছিলেন একজন ধনাঢ্য লবণ ব্যবসায়ী। এই বাড়ির উত্তর-পশ্চিম অংশে লবণের একটা বড় গোলাবাড়ি ছিল। এই কারণে এই বাড়ির নাম রাখা

বালিয়াটির জমিদারদের পূর্বপুরুষ গোবিন্দ রায় সাহা ছিলেন একজন ধনাঢ্য লবণ ব্যবসায়ী। এই বাড়ির উত্তর-পশ্চিম অংশে লবণের একটা বড় গোলাবাড়ি ছিল। এই কারণে এই বাড়ির নাম রাখা হয়েছিল গোলাবাড়ি। সেকালে গোলাবাড়ির চত্বরে বারুনির মেলা বসত এবং এর পশ্চিম দিকে তাল পুকুরের ধারে আয়োজন করা হতো রথ উৎসব,বসত রথের মেলা। তবে পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে বর্তমানে এই স্থানে রথের মেলা বসে না।

জমিদার বাড়ির সামনেই রয়েছে একটি বড় পুকুর। বাড়িটির সম্মুখভাগে চারটি সুবিন্যস্ত সিংহদ্বার সমৃদ্ধ চারটি বিশাল প্রাসাদ আছে।

এই প্রাসাদের প্রতিটি প্রবেশ পথের চূড়ায় রয়েছে পাথরের তৈরি চারটি সিংহমূর্তি, যাকে বলে সিংহ দরজা। ছোট ছোট ফুল সমৃদ্ধ এমন প্রাচীন সৌন্দর্য যেন দৃষ্টি নন্দিত।

স্থানীয়দের মতে, এর মূল প্রবেশদ্বার কাঠের তৈরি ছিল। এখানে পূর্ববাড়ি, পশ্চিমবাড়ি, উত্তরবাড়ি, মধ্যবাড়ি এবং গোলাবাড়ি নামে বড় আকারের পাঁচটি ভবন। জমিদার বাড়ির এই বিভিন্ন অংশ বালিয়াটি জমিদার পরিবারের উত্তরাধিকারীরাই তৈরি করেন বলে জানা যায়। এই জমিদার বাড়ির প্রথম সারিতে চারটি প্রাসাদ রয়েছে। এগুলোর নির্মাণশৈলী একই রকম।   ৫০ ফুট উঁচু প্রাসাদগুলির  কারুকার্য  দর্শণার্থীদের বিস্মিত করে । 

মাঝখানের দুটি প্রাসাদ দুই তলা এবং পাশের দুটো প্রাসাদ তিন তলা। এর মধ্যে ১টি প্রাসাদে আগে কলেজ ছিল। ২ নম্বর প্রাসাদের ভেতরে বর্তমান জাদুঘর। 

২ নং প্রাসদের দ্বিতীয় তলায় ছিল জমিদারদের রংমহল। এখানে জমিদারদের ব্যবহৃত নিদর্শনাদি দর্শনার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে।

এখানে দেশি দর্শনার্থীরা ২০ টাকা, সার্কভুক্ত দেশের দর্শনার্থীরা ১০০ টাকা এবং অন্যান্য বিদেশি দর্শনার্থীরা ২০০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ঢুকতে পারবে। রবিবার পূর্ণদিবস ও সোমবার অর্ধদিবস বন্ধ থাকে এই যাদুঘর ও পর্যটন কেন্দ্রটি।

Scroll to Top