নিজস্ব প্রতিবেদক: মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে সম্প্রতি শত শত বড় সাইজের পাঙ্গাশ মাছ হরহামেশাই পাওয়া যাচ্ছে সকালের আড়ৎ এবং হাট-বাজারে। জেলেদের দাবি, পদ্মানদী থেকে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ আহরণের সময় বিভিন্ন জালে আটকা পড়ে বড় সাইজের পাঙ্গাস। বাজার কিংবা আড়তে বিক্রিকৃত প্রতিটা পাঙ্গাশের ওজন প্রায় ৭- ১৫ কেজি। এই পাঙ্গাশগুলো তারা পদ্মানদী থেকে নিয়মিত ধরছে বলে দাবি তাদের। আর ক্রেতাদের অভিযোগ, পাঙ্গাশগুলো জেলার শিবালয়, দৌলতপুর, রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া, ফরিদপুর থেকে চাষ করা বড় বড় পুকুর থেকে এনে কৌশলে এগুলো পদ্মার পাঙ্গাশ বলে চালিয়ে দিচ্ছে, ক্রেতাদের মিথ্যা বলে ঠকাচ্ছে জেলে ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে, বিকেলে উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর অস্থায়ী আড়ৎ (ইলিশের বাজার) এবং সকালে আন্ধারমানিক, আরিচা ও পাটুরিয়া আড়তগুলোতে দেখা যায়, বিভিন্ন প্রকার মাছের সাথে ৮-১৫ কেজি ওজনের বড় বড় সাইজের পাঙ্গাশ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে নিলামে।
এছাড়া, উপজেলার বিভিন্ন হাট, বাজারে দাম বেশি হওয়া আর ক্রেতা কম থাকায় বড় সাইজের পাঙ্গাশ কেটে ভাগ করে প্রতি কেজি ১ হাজার থেকে ১৩শ টাকা প্রতিকেজি দরে নিচ্ছেন ক্রেতারা।
মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের প্রভাষক ও স্থানীয় বাসিন্দা মো. আজিম মিয়া বলেন, পদ্মান নদীর পাঙ্গাশে শরীরের রং হওয়ার কথা হালকা লালচে সাদা সাদা। লেজে হালকা শ্যাওলা ভাব দেখা যাবারও কথা। জালের ফাদে আটকা পড়লে পাঙ্গাশের পেছনের অংশে বিভিন্ন ক্ষতও হতে পারে। এছাড়া চোখও সাদা হওয়ার কথা। কোনটা যে পদ্মা নদীর বা চাষ করা সেটা জেলেরাই ভাল জানে। সারাবছর হঠাৎ দু চারটা পাঙ্গাশ আড়তে, হাট-বাজারে পাওয়া যেতো, আর এখন হঠাৎ করে শত শত পাঙ্গাশ এলো কোথা থেকে?
বাহাদুরপুর গ্রামের আজিজ মিয়া বলেন, “পরিচিত এক বন্ধুকে ১১কেজি ৬ গ্রাম ওজনের একটি পাঙ্গাশ কিনে দিলাম ১৩ হাজার ৪শ টাকা দিয়ে। কেনার পর সন্দেহ হয়, এটা পদ্মানদীর পাঙ্গাশ কিনা? পদ্মানদী থেকে পাঙ্গাশ ধরা পড়লেতো কারেন্ট জালে ধরা পড়ছে, আর কারেন্ট জালে আটকা পরার পর তো পাঙ্গাশটি ছাটাছাটি করবে, ছাটাছাটি করার পর পাঙ্গাশের শরীরে বিভিন্ন স্থানে জাল অথবা জালের ফাদে পড়ে ক্ষত, জখম থাকার কথা। কিন্ত পাঙ্গাশ মাছগুলো ক্ষতহীন আর চকচকা দেখে আমার সন্দেহ আরও বেড়ে যায়।
উথিুলীর নিরঞ্জন সাহা জানান, পদ্মাননদীর পাঙ্গাশে শরীরের রং হওয়ার কথা হালকা লালচে সাদা সাদা। লেজে হালকা শ্যাওলা ভাব দেখা যাবার কথা। জালের ফাদে আটকা পড়লে পাঙ্গাশের পেছনের অংশে বিভিন্ন ক্ষত হবে আর চোখ সাদা হওয়ার কথা। এছাড়া পদ্মার পাঙ্গাশ হলে কাটার পর হলদে রং হওয়ার কথা। এই লক্ষনগুলোর কিছুই নেই পাঙ্গাশের। কোনটা যে কি, সেটা জেলেরাই ভালো বলতে পারবে।
হরিরামপুরের বাহাদুরপুর অস্থায়ী মাছের আড়তে ( ইলিশের হাট) বেশ কয়েকজন ক্রেতার তোপের মুখে পড়ে কয়েকজন পাঙাশ মাছ ব্যবসায়ী। মাছ ব্যবসায়ীরা স্বীকার করতে বাধ্য হয়, জেলেরা শিবালয়ের দিক থেকে পাঙ্গাশগুলো আনে এবং শিবালয় পদ্মা নদী থেকে ধরেছে বলে তারা দাবি করে।
হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.শাহরিয়ার রহমান জানান, এ ধরনের অভিযোগ এখনো পাইনি। পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মানিকগঞ্জ জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক আসাদুজ্জামান রুমেল বলেন, যদি কোন জেলে বা ব্যবসায়ী প্রতারণা করে থাকে তবে ভোক্তাদের সাথে এটা বড় ধরনের অন্যায়। প্রমাণসহ ধরতে পারলে আমি অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো। আপনারা একটু খোঁজ নেন, আমিও খোঁজ নিচ্ছি, আসলেই কোথা থেকে এই পাঙ্গাশগুলো আসে।