নারী মেম্বারের নেতৃত্বে মারধর, চিকিৎসাধীন অবস্থায় যুবকের মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার: সদর উপজেলার আটিগ্রাম ইউনিয়নে এক নারী ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে স্থানীয় বখাটেরা বাড়ি গিয়ে রাজিব মিয়া (৩০) নামের এক যুবককে মারধর করে।  

পরে ২৩ নভেম্বর রাত পৌনে ১২টার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাজিব। এ ঘটনায় স্থানীয় থানায় মামলা দায়েরের পর দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ।

এলপি গ্যাস সিলিন্ডার চুরির অভিযোগে গত ৮ নভেম্বর রাজিবকে তার বাড়িতে গিয়ে মারধর করা হয়। অভিযুক্তের নাম রেনুকা বেগম, তিনি আটিগ্রাম ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী সদস্য।  

অভিযোগ রয়েছে, কাবিখা/কাবিটা প্রকল্পের শ্রমিকের পারিশ্রমিকের টাকা থেকে ভাগ না দেওয়ায় ইউপি সদস্য রেনুকা বেগমের সঙ্গে মনোমালিন্য তৈরি হয় রাজিব ও তার মামা নজরুল ইসলামের।

জানা যায়, গত ৮ নভেম্বর বিকেলে বাজারে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন রাজিব মিয়া। পথে একটি এলপি গ্যাস সিলিন্ডার রাস্তার ধারে পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। বাজার থেকে ফেরার পথে দেখেন সিলিন্ডারটি একই স্থানে পড়ে আছে। এরপর ওই পরিত্যক্ত সিলিন্ডারটি বাড়িতে নিয়ে আসেন তিনি। বাড়িতে প্রবেশের পাঁচ-ছয় মিনিট পর মেম্বার রেনুকা কয়েক জন যুবক নিয়ে এসে সিলিন্ডার চুরির অভিযোগে রাজিবকে মারধর করতে থাকেন। এসময় রাজিবের ডাক-চিৎকারে বের হন তার মামা নজরুল ইসলাম। রাজিবকে না মারতে দু-হাত জোড় করে যুবকদের কাছে মাফ চান নজরুল। কিন্তু ওই সময় নারী মেম্বার রেনুকা দুজনকেই মারতে নির্দেশ দেন যুবকদের। রেনুকার নির্দেশে বখাটেরা রাজিব ও নজরুলকে মারধর করে। এক পর্যায়ে নজরুল জ্ঞান হারিয়ে ফেললে বখাটেদেরসহ মেম্বার রেনুকা চলে যান। স্থানীয়রা আহত রাজিব ও নজরুলকে হাসপাতালে ভর্তি করে।  

ঘটনার কয়েকদিন পর বিচার বসিয়ে মোটা অঙ্কের জরিমানা করেন স্থানীয় মাতবররা। এরইমধ্যে হাসপাতালে মারা যান রাজিব।  

রাজিব কীভাবে মারা গেছেন প্রশ্নে তার মা নাজমা বেগম বলেন , আজ আমরা গরিব বলে ওরা বাড়িতে ঢুকে আমার ছেলেরে মারল। তাও কেউ কোনো বিচার করল না। আমার বুকের মানিককে যারা মেরে ফেলছে আমি তাগো ফাঁসি চাই।

রাজিবের মামা নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা ইউনিয়ন পরিষদের কর্মসূচির রাস্তার কাজ করি। কাজ শেষ হলে মোবাইল ফোনে টাকা আসে। সেই টাকা থেকে মেম্বারকে ভাগ দিতে হয়। আমি আমারটা দিলেও আমার ভাগিনা দেয় নাই। তার কাছে টাকা চাইলেও সে দিতে রাজি হয়নি। কারণ, সে বলে আমার কাজের টাকা তাগো দিমু ক্যাঁ। একদিন রেনুকার মেজো ছেলে জাহিদ বাড়িতে এসে টাকা চায় এবং না দেওয়াতে হুমকি দিয়ে চলে যায় সে। টাকার ভাগ না দেওয়াতেই রেনুকা মেম্বারের সঙ্গে রাজিবের সম্পর্ক নষ্ট হয়। সেই সূত্র ধরেই গ্যাস সিলিন্ডারের নাটক সাজিয়ে আমার ভাগিনাকে মেরে ফেলেছে রেনুকার লোকজন।  

এ বিষয়ে অভিযুক্ত নারী ইউপি সদস্য রেনুকা বেগমের বক্তব্য জানতে তার বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার ব্যক্তিগত ফোনে কল দিলে তার স্বামী কহিনূর গাজী কলটি রিসিভ করেন।  

তিনি বলেন, আপনার কাছে একজন লোক পাঠাচ্ছি তিনি কথা বলবেন। কহিনূর গাজীর পাঠানো লোক (জতিন বাবু ) এসে প্রতিবেদককে সংবাদ প্রকাশ না করতে টাকা দিতে চান।  

এমন অনৈতিক প্রস্তাবে সাড়া না দিলে অভিযুক্ত নারী ইউপি সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য একটি ফোন নাম্বার দেন তার স্বামী কহিনূর গাজী।  

সেই নম্বরে কল দিলে রেনুকা বেগম ফোন রিসিভ করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার করা হচ্ছে। আমি ওদের মারামারি ফিরিয়েছি।  

তবে কেন প্রতিবেদন প্রকাশ না করতে টাকার লোভ দেখিয়েছেন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাকে কেউ একজন বলেছে সাংবাদিকরা ফোন দিলে টাকা দিতে হবে।  

কাবিখা/কাবিটা প্রকল্পের জন্য শ্রমিকদের কাছ থেকে ভাগের টাকা দাবি করার অভিযোগের বিষয়ে কোনো উত্তর দিতে পারেনি ইউপি সদস্য রেনুকা।

এদিকে মারধরে মৃত্যুর বিষয়ে আটিগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. নূর-এ আলম সরকার বলেন , গত ৮ নভেম্বর গ্যাস সিলিন্ডার চুরির একটি ঘটনা নিয়ে মারামারি হয়েছে। খবর শুনে আমি দ্রুত সেখানে যাই। যাওয়ার পর দেখি দুই পক্ষই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেছে। এরপর শুনলাম রাজিব চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এ ঘটনায় নাকি মামলাও হয়েছে।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি ) আব্দুর রউফ সরকার বলেন, আটিগ্রাম ইউনিয়নে এক মারামারির ঘটনায় আহত যুবক রাজিব চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। আটিগ্রাম ইউনিয়নের নারী সদস্য রেনুকা বেগমসহ আরও বেশ কয়েক জনকে আসামি করে মামলা করেছেন রাজিবের মা নাজমা বেগম। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুইজনকে আটক করা হয়েছে।  

তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও মন্তব্য করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। 

Scroll to Top